ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরের অবৈধ ইহুদি বসতি এলাকায় ব্যবসা কার্যক্রম চালিয়ে লাভবান হওয়া ১৫৮টি প্রতিষ্ঠানের নামের তালিকা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়। শুক্রবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।
প্রকাশিত তালিকায় উল্লেখযোগ্য ভ্রমণ ও বুকিং সেবাদানকারী আন্তর্জাতিক কিছু কোম্পানিও রয়েছে। এর মধ্যে জনপ্রিয় আবাসন ও ট্রাভেল সাইটগুলোর নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রতিবেদনে জানানো হয়, এসব প্রতিষ্ঠান এমন এলাকায় কার্যক্রম চালাচ্ছে, যেগুলোকে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত অবৈধ ঘোষণা করেছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর তাদের তথ্যভান্ডার সর্বশেষ হালনাগাদ করেছে। এতে দেখা যায়, মোট ১৫৮টি প্রতিষ্ঠান এ তালিকায় স্থান পেয়েছে। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই ইসরায়েলি মালিকানাধীন হলেও যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, চীন, ফ্রান্স ও জার্মানিতে নিবন্ধিত বেশ কিছু বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানও যুক্ত রয়েছে।
২০২৩ সালের জুনের পর থেকে করা এ হালনাগাদ তথ্যে নতুনভাবে ৬৮টি কোম্পানি যোগ হয়েছে। অন্যদিকে সাতটি প্রতিষ্ঠানের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাজ্যে নিবন্ধিত একটি অনলাইন ট্রাভেল কোম্পানি এবং স্পেনে নিবন্ধিত আরেকটি ভ্রমণ এজেন্সি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যবসায়িক কার্যক্রমের মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘন বা তা উসকে দেওয়া থেকে বিরত থাকা প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব। গাজায় বসতি সম্প্রসারণের জন্য বিশেষ করে নির্মাণ, আবাসন, খনিজ ও খনি খাতকে গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, এ ছাড়া আরও ৩০০টির বেশি প্রতিষ্ঠানকে পর্যবেক্ষণের আওতায় রাখা হয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান মন্তব্য করেছেন, সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালানো প্রতিষ্ঠানগুলোকে অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হবে। তারা যেন কোনোভাবেই মানবাধিকার লঙ্ঘনে ভূমিকা না রাখে, সেটা নিশ্চিত করা জরুরি।
অন্যদিকে পশ্চিম তীরে সশস্ত্র বসতি স্থাপনকারীরা সরকারি সমর্থন নিয়ে ফিলিস্তিনিদের ভয়ভীতি প্রদর্শন, হামলা এবং হত্যা অব্যাহত রেখেছে। পরিবারগুলোকে বাস্তুচ্যুত করা হচ্ছে, কৃষিজমি দখল করা হচ্ছে এবং এ কর্মকাণ্ডকে মানবাধিকার সংস্থাগুলো জাতিগত নিধন হিসেবে অভিহিত করেছে।
প্রতিবেদন প্রকাশের এই সময়টিকে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। কারণ, পশ্চিম তীরে অবৈধ দখল এবং গাজায় চলমান জাতিগত নিধনের ঘটনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ক্ষোভ এখন আরও বেড়েছে।
১৯৬৭ সালের যুদ্ধে পশ্চিম তীর দখলের পর থেকে ইসরায়েল ধারাবাহিকভাবে বসতি সম্প্রসারণ করছে। সেখানে সড়ক, প্রাচীর এবং চেকপোস্ট তৈরি করে ফিলিস্তিনিদের চলাচল কঠোরভাবে সীমিত করা হয়েছে। এর ফলে সাধারণ মানুষের জীবনে প্রতিনিয়ত ভোগান্তি বাড়ছে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাত্রা তীব্রতর হচ্ছে।
জাতিসংঘের এই তালিকা প্রকাশের মাধ্যমে আবারও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনায় এসেছে ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণ ও মানবাধিকার সংকটের বিষয়টি।