অভিবাসন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের গভর্নর ও শিকাগো শহরের মেয়রের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ—এই দুইজন সরকারি কর্মকর্তা ফেডারেল অভিবাসন কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
একটি সামাজিক মাধ্যম পোস্টে প্রেসিডেন্ট লিখেছেন, “শিকাগোর মেয়র ও ইলিনয় গভর্নর—দুজনকেই জেলে পাঠানো উচিত! তাঁরা আইস (ICE) কর্মকর্তাদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছেন।”
এটি প্রথম নয় যে, ট্রাম্প শিকাগো শহরকে “যুদ্ধক্ষেত্র” হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি অভিবাসনবিরোধী পদক্ষেপে শহরটির অবস্থান নিয়ে সমালোচনা করে আসছেন। অন্যদিকে, রাজ্যের গভর্নর ট্রাম্পের এই অবস্থানকে “স্বৈরাচারী মনোভাব” বলে আখ্যা দিয়েছেন।
এমন উত্তেজনাপূর্ণ সময়েই শিকাগোতে পৌঁছেছে জাতীয় গার্ড বাহিনীর শত শত সদস্য, যা ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে পাঠানো হয়েছে। এতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
ডেমোক্র্যাট নেতৃত্বাধীন অঙ্গরাজ্য ও শহরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের এই মুখোমুখি অবস্থান যেন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিকে নতুন করে বিভক্ত করেছে।
শিকাগোর মেয়র ট্রাম্পের মন্তব্যের কঠোর জবাব দিয়েছেন। তিনি বলেন, “এটাই প্রথম নয়, ট্রাম্প এক কৃষ্ণাঙ্গ মানুষকে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করার চেষ্টা করছেন। আমি কোথাও যাচ্ছি না।”
অন্যদিকে, ইলিনয় গভর্নর ঘোষণা দেন, “আমি পিছু হটব না। প্রেসিডেন্ট এখন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের গ্রেপ্তার করতে চাইছেন যারা তাঁর ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। এর পর আর কী বাকি রইল পূর্ণ স্বৈরশাসনের পথে?”
শিকাগোতে জাতীয় গার্ড মোতায়েনের আগে একইভাবে সেনা পাঠানো হয়েছিল লস অ্যাঞ্জেলেস ও ওয়াশিংটন ডিসিতে। ট্রাম্পের দাবি—এইসব এলাকায় “অপরাধ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে”।
তবে, ওয়াশিংটন ডিসির অ্যাটর্নি জেনারেল সম্প্রতি এই মোতায়েনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “এটি অপ্রয়োজনীয়, অনাকাঙ্ক্ষিত এবং শহরবাসীর জন্য ক্ষতিকর।”
এছাড়া প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মেমফিস ও পোর্টল্যান্ড শহরেও সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেন। যদিও আদালত পোর্টল্যান্ডে মোতায়েন স্থগিত করেছে, তবে শিকাগোতে আপাতত অনুমতি দিয়েছে।
এরই মধ্যে ইলিনয় রাজ্য সরকার ও শিকাগো সিটি প্রশাসন যৌথভাবে ফেডারেল বাহিনীর এই মোতায়েন ঠেকাতে মামলা করেছে। আগামী বৃহস্পতিবার এই মামলার শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যদি আদালত এই মোতায়েন আটকে দেয়, তবে তিনি “ইনসারেকশন অ্যাক্ট” প্রয়োগ করে সেনাবাহিনী ব্যবহারের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করবেন। তাঁর ভাষায়, “যদি মানুষ মারা যায় এবং আদালত বা স্থানীয় প্রশাসন আমাদের থামায়, তবে আমাকে আইন প্রয়োগ করতেই হবে।”
হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা এ নিয়ে সমালোচনার জবাবে বলেছেন, এই মোতায়েন থামানোর প্রচেষ্টা “যুক্তরাষ্ট্রের আইন ও সংবিধানের বিরুদ্ধে এক প্রকার বিদ্রোহ।”
এদিকে, গত সপ্তাহে শিকাগোতে অভিবাসনবিরোধী অভিযানের সময় পরিস্থিতি সহিংস আকার ধারণ করে। অভিবাসন কর্তৃপক্ষের দাবি, এক নারী ও তাঁর সঙ্গীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়িতে ধাক্কা দিলে তারা পাল্টা গুলি চালায়।
তবে ওই নারীর আইনজীবী সরকারের এই বর্ণনাকে “ভিত্তিহীন” বলে দাবি করেছেন। আহত নারী নিজেই হাসপাতালে ভর্তি হন বলে জানা গেছে।
বুধবার বিকেলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বে “অ্যান্টিফা”—একটি ঢিলেঢালা বামপন্থী আন্দোলন—নিয়ে এক বিশেষ গোলটেবিল বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনাপ্রবাহ শুধু অভিবাসন ইস্যু নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার ভারসাম্য ও ফেডারেল বনাম রাজ্য প্রশাসনের সম্পর্ক নিয়েও নতুন প্রশ্ন তুলছে।



