যুক্তরাষ্ট্রে অননুমোদিত অভিবাসীদের জন্য ফেডারেল ভর্তুকিযুক্ত স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ নেই। তবে একটি সীমিত ব্যতিক্রম রয়েছে—যা হলো ইমারজেন্সি মেডিকেড। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, এই ইমারজেন্সি মেডিকেড ব্যয় যুক্তরাষ্ট্রের মোট মেডিকেড খরচের এক শতাংশেরও কম।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এই গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে জার্নাল অব দ্য আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন-এ। এতে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি এবং ৩৮টি অঙ্গরাজ্যের ২০২২ অর্থবছরের ইমারজেন্সি মেডিকেড ব্যয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ফলাফলে দেখা যায়, মোট মেডিকেড ব্যয়ের মাত্র ০.৪ শতাংশ এসেছে ইমারজেন্সি মেডিকেড থেকে, যা গড়ে প্রতি নাগরিকের জন্য প্রায় ১০ ডলার ব্যয়ের সমান।
গবেষণার লেখকদের মতে, ইমারজেন্সি মেডিকেড সাধারণত জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসার জন্য বরাদ্দ থাকে—যেমন প্রসবকালীন সেবা বা গুরুতর শারীরিক অবস্থায় প্রয়োজনীয় তাৎক্ষণিক চিকিৎসা। কিছু অঙ্গরাজ্যে এর আওতায় ডায়ালাইসিস ও ক্যান্সার চিকিৎসাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে রিপাবলিকান দল মেডিকেড খাতে এক ট্রিলিয়ন ডলার কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে। তাদের দাবি, এই কাটছাঁট মূলত অবৈধ অভিবাসী এবং “আইনগতভাবে উপস্থিত” অন্য কিছু শ্রেণির ব্যক্তির চিকিৎসা সীমিত করবে। এদের মধ্যে রয়েছেন ডিফার্ড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যারাইভালস (DACA) প্রোগ্রামের সুবিধাভোগী, যারা শিশু অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন; টেম্পোরারি প্রটেকটেড স্ট্যাটাস (TPS) প্রাপ্ত ব্যক্তিরা; এবং আশ্রয়প্রার্থী বা শরণার্থী যাদের আইনি প্রক্রিয়া এখনো চলছে।
বর্তমান আইনে অবৈধ অভিবাসীদের জন্য ফেডারেল ভর্তুকিযুক্ত স্বাস্থ্যসেবা—যেমন মেডিকেড, চিলড্রেন’স হেলথ ইনস্যুরেন্স প্রোগ্রাম বা অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট—এর কোনো সুযোগ নেই। শুধুমাত্র ইমারজেন্সি মেডিকেডই সেই ব্যতিক্রম, যা গুরুতর রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে স্থিতিশীল করার জন্য জরুরি চিকিৎসা দেয়, যদি তারা নাগরিক হতেন তাহলে যেভাবে চিকিৎসা পেতেন।
গবেষণায় আরও দেখা যায়, যেসব অঙ্গরাজ্যে অননুমোদিত অভিবাসীর সংখ্যা বেশি, সেখানে ইমারজেন্সি মেডিকেড ব্যয় গড়ে মোট ব্যয়ের প্রায় ০.৯ শতাংশ; আর যেখানে এই জনসংখ্যা কম, সেখানে তা মাত্র ০.১ শতাংশ। অর্থাৎ, জনসংখ্যাগত ব্যবধান সত্ত্বেও সর্বত্রই এই ব্যয় মোট খরচের এক শতাংশের নিচে রয়ে গেছে।
গবেষণায় বলা হয়, “যদিও অননুমোদিত অভিবাসীর সংখ্যা বেশি এমন রাজ্যগুলোতে মাথাপিছু ব্যয় প্রায় ১৫ গুণ বেশি, তবুও মোট মেডিকেড খরচের এক শতাংশও ছাড়ায়নি। ফলে এর আর্থিক প্রভাব সীমিত। ইমারজেন্সি মেডিকেড খাতে কাটছাঁট করলে সামগ্রিকভাবে তেমন কোনো খরচ সাশ্রয় হবে না, বরং এতে বড় ক্ষতির মুখে পড়বে সেই রাজ্যগুলো, যেখানে অননুমোদিত অভিবাসীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি।”
এদিকে ডেমোক্র্যাট দল রিপাবলিকানদের প্রস্তাবিত এই কাটছাঁটের বিরোধিতা করে একটি বিল পেশ করেছে। তবে সেই বিলে অবৈধভাবে অবস্থানরত অভিবাসীদের জন্য ফেডারেল স্বাস্থ্যসেবা উন্মুক্ত করার কোনো প্রস্তাব নেই। মূল বিতর্কটি কেন্দ্রীভূত রয়েছে এমন অভিবাসীদের নিয়ে, যাদের যুক্তরাষ্ট্র সরকার “আইনগতভাবে উপস্থিত” হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও, এখনো তাদের আইনি মর্যাদা আদালতে কার্যকর হয়নি।
বর্তমানে অনুমান করা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১৪ লাখ মানুষ “লফুলি প্রেজেন্ট” বা আইনগতভাবে উপস্থিত হিসেবে বিবেচিত। সরকার তাদের সম্পর্কে অবগত, এবং এদের বড় অংশ ইতোমধ্যেই বৈধ নাগরিকত্ব বা গ্রিন কার্ডের প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
সর্বোপরি, গবেষণাটি স্পষ্ট করে দিয়েছে—ইমারজেন্সি মেডিকেড খরচ যুক্তরাষ্ট্রের মোট স্বাস্থ্য বাজেটের তুলনায় সামান্যই। তবুও এই খাত নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক চলছেই, যেখানে মূল প্রশ্ন একটাই—মানবিক চিকিৎসা সেবার প্রয়োজনীয়তা ও রাষ্ট্রীয় নীতির ভারসাম্য কোথায় টানা হবে।



