২০২৬ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের টিকিট বিক্রি ঘিরে বিশ্বজুড়ে যে উন্মাদনা তৈরি হয়েছে, তা অতীতের সব রেকর্ডকে ছাপিয়ে গেছে। ফিফার প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলমান র্যান্ডম সিলেকশন ড্র টিকেটিং পর্ব শুরু হওয়ার অর্ধেক সময় পার না হতেই টিকিটের চাহিদা পৌঁছেছে নজিরবিহীন উচ্চতায়। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ২০০টির বেশি দেশের ফুটবলপ্রেমীদের কাছ থেকে ১৫ কোটিরও বেশি টিকিটের আবেদন জমা পড়েছে।
১১ ডিসেম্বর শুরু হওয়া এই টিকেটিং পর্বের মধ্যবর্তী পরিসংখ্যান বলছে, যাচাইকৃত ব্যক্তিগত ক্রেডিট কার্ড নম্বরের ভিত্তিতে জমা পড়া আবেদন অনুযায়ী টিকিটের চাহিদা সরবরাহের তুলনায় ৩০ গুণেরও বেশি। এই সংখ্যা শুধু বর্তমান আয়োজনের ক্ষেত্রেই নয়, বিশ্বকাপ ইতিহাসের প্রেক্ষাপটেও ব্যতিক্রমী। ১৯৩০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ২২টি বিশ্বকাপের মোট ৯৬৪টি ম্যাচে যে সংখ্যক দর্শক সরাসরি মাঠে উপস্থিত ছিলেন, সেই মোট সংখ্যার চেয়েও বর্তমান আবেদনের পরিমাণ প্রায় ৩ দশমিক ৪ গুণ বেশি। ফুটবল বিশ্বে এমন চিত্র আগে কখনও দেখা যায়নি।
ফিফার শীর্ষ নির্বাহী তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক বার্তায় জানিয়েছেন, ২০২৬ সালের বিশ্বকাপ হবে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এবং সর্বাধিক অন্তর্ভুক্তিমূলক ক্রীড়া আয়োজন। মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে ১৫ কোটির বেশি টিকিটের আবেদন আসা এই কথারই প্রমাণ। তাঁর মতে, এই বিপুল আগ্রহ ২০০টির বেশি দেশের সমর্থকদের আবেগ এবং ভালোবাসার বাস্তব প্রতিফলন।
ওই বার্তায় আরও বলা হয়, ফুটবল এমন একটি খেলা যা সীমানা পেরিয়ে মানুষকে একত্রিত করতে পারে। উত্তর আমেরিকায় অনুষ্ঠিতব্য এই বিশ্বকাপের মাধ্যমে সারা বিশ্বের মানুষ এক জায়গায় মিলিত হওয়ার সুযোগ পাবে। মাঠের খেলাই শুধু নয়, এই আয়োজন হবে ঐক্য, সংস্কৃতি ও উদ্যাপনের এক অনন্য উৎসব।
র্যান্ডম সিলেকশন ড্র টিকেটিং প্রক্রিয়া ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত চালু থাকবে। এই সময়ের মধ্যে যাঁরা টিকিটের জন্য আবেদন করবেন, তাঁদের সবাইকে সমান সুযোগ দেওয়ার জন্য একটি ড্র অনুষ্ঠিত হবে। ড্রয়ের মাধ্যমে নির্বাচিত আবেদনকারীরা টিকিট পাওয়ার নিশ্চয়তা পাবেন। যাঁরা এই ধাপে সফল হবেন না, তাঁদের জন্য পরবর্তী বিক্রয় পর্বে অতিরিক্ত টিকিট কেনার সুযোগ রাখা হবে বলে জানানো হয়েছে।
তবে টিকিটের বিপুল চাহিদার পাশাপাশি মূল্য নিয়ে সমালোচনাও সামনে এসেছে। আগামী ১১ জুন থেকে শুরু হতে যাওয়া এই বিশ্বকাপের টিকিটের দামকে অনেকেই অস্বাভাবিক উচ্চ বলে আখ্যা দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোয় আয়োজিত এই আসরের টিকিট মূল্যকাঠামো নিয়ে বিভিন্ন সমর্থক সংগঠন ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, সাধারণ দর্শকদের জন্য এই দাম অনেক ক্ষেত্রেই নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।
বিশেষ করে গ্রুপ পর্বের ম্যাচগুলোর টিকিটের দাম ২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপের তুলনায় সর্বোচ্চ তিন গুণ পর্যন্ত বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে। আরও বেশি আলোচনায় এসেছে ফাইনাল ম্যাচের টিকিট মূল্য। নিউ জার্সিতে অনুষ্ঠিতব্য ফাইনালের সবচেয়ে কম দামের টিকিটের মূল্যও কয়েক হাজার পাউন্ড নির্ধারণ করা হয়েছে, যা বিশ্বজুড়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে।
এ বিষয়ে ফিফার শীর্ষ নির্বাহী বলেছেন, টিকিটের এই মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে দর্শকদের অস্বাভাবিক চাহিদার কারণেই। তাঁর ভাষায়, বিক্রির জন্য যেখানে ছয় থেকে সাত মিলিয়ন টিকিট রাখা হয়েছিল, সেখানে মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে ১৫ কোটি আবেদন পাওয়া গেছে। প্রতিদিন গড়ে এক কোটি টিকিটের অনুরোধ আসছে, যা বিশ্বকাপের জনপ্রিয়তার শক্তিশালী প্রমাণ।
তিনি আরও জানান, প্রায় একশ বছরের বিশ্বকাপ ইতিহাসে ফিফা মোট ৪৪ মিলিয়ন টিকিট বিক্রি করেছে। অথচ মাত্র দুই সপ্তাহে যে পরিমাণ আবেদন এসেছে, তা কয়েক শতাব্দীর বিশ্বকাপ আয়োজনের সমান। এই বাস্তবতা ফুটবলের বৈশ্বিক প্রভাব ও আকর্ষণকে নতুন করে সামনে এনে দিয়েছে।
আগামী ১১ জুন শুরু হয়ে ১৯ জুলাই ফাইনালের মাধ্যমে শেষ হবে ২০২৬ বিশ্বকাপ। এই আসরেই প্রথমবারের মতো ৪৮টি দল অংশ নেবে এবং মোট ১০৪টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে, যা বিশ্বকাপ ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।



