ইউরোপের বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারে এখন প্রতিযোগিতা তুঙ্গে, আর সেই প্রতিযোগিতার মাঝেই টেসলা উন্মোচন করেছে তাদের নতুন কম দামের দুটি মডেল—মডেল ওয়াই স্ট্যান্ডার্ড এবং মডেল ৩। মঙ্গলবার প্রকাশিত এই দুটি সংস্করণের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে যথাক্রমে ৩৯,৯৯০ ও ৩৬,৯৯০ ডলার। তবে ইউরোপীয় বাজারে ইতোমধ্যেই এমন অনেক বাজেট ইভি রয়েছে, যেগুলোর দাম ৩০,০০০ ডলারেরও নিচে। ফলে টেসলার জন্য এই বাজারে নিজেদের অবস্থান পুনরুদ্ধার করা সহজ হবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রে এই পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। সেখানে এখন পর্যন্ত কেবলমাত্র নিসান লিফ এই দামের শ্রেণিতে পড়ছে। কিন্তু ইউরোপে প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। গবেষণা প্রতিষ্ঠান অটোফোরকাস্ট সলিউশনসের এক সহ-সভাপতি জানিয়েছেন, “এই বাজারে প্রতিযোগিতা ভয়াবহ রকমের তীব্র।” ইউরোপে টেসলার নতুন এই সস্তা মডেলগুলো বাজারে আনলেও, প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানিগুলোর সাশ্রয়ী মডেল তাদের বিক্রিতে প্রভাব ফেলতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
টেসলার দাবি, তাদের তুলনামূলক বেশি দামের গাড়িগুলোর মান ও প্রযুক্তি অন্যদের চেয়ে উন্নত। কিন্তু ইউরোপে কোম্পানির বাজার শেয়ার ২০২৩ সালের পর থেকে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে—১.৫ শতাংশে। এক সময় মডেল ওয়াই ইউরোপের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া গাড়ি হলেও এখন সেটির জনপ্রিয়তা অনেকটাই কমে গেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এর পেছনে কারণ হতে পারে পুরনো মডেল লাইনআপ এবং প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীর বিতর্কিত রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে জনগণের বিরূপ প্রতিক্রিয়া।
টেসলা আশা করছে, নতুন সাশ্রয়ী মডেলগুলো আবার বিক্রি বাড়াতে সাহায্য করবে। ২০২৪ সালে প্রথমবারের মতো টেসলার বৈশ্বিক ডেলিভারি কমে গেছে, এবং চলতি বছর তা আরও ১০ শতাংশ হ্রাস পেতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্লেষণ সংস্থা ভিজিবল আলফা।
যুক্তরাষ্ট্রে মডেল ওয়াই স্ট্যান্ডার্ডের দাম ৪০,০০০ ডলারের নিচে নামিয়ে এনে টেসলা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে হুন্ডাইয়ের আয়নিক ৫, জেনারেল মোটরসের শেভ্রোলেট ব্লেজার এবং ফক্সওয়াগনের আইডি.৪ মডেলের সঙ্গে। তবে সেপ্টেম্বরের শেষে ৭,৫০০ ডলারের কর ছাড় শেষ হয়ে যাওয়ায় মার্কিন ইভি বাজারের প্রবৃদ্ধি সাময়িকভাবে স্থবির হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, বিশ্বের বৃহত্তম ইভি বাজার চীনে টেসলার এই নতুন সংস্করণগুলো স্থানীয় ব্র্যান্ডগুলোর তুলনায় এখনও অনেক বেশি দামী। দেশীয় কোম্পানি যেমন বিওয়াইডি ও এসএআইসি-জিএম-উলিং এর তৈরি ইভিগুলো সেখানে অনেক কম মূল্যে পাওয়া যাচ্ছে।
ইউরোপে টেসলার প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরও জটিল। এখানে রয়েছে অনেক সস্তা বিকল্প, যেমন বিওয়াইডি ডলফিন সার্ফ (২৩,০০০ ইউরো), দাসিয়া স্প্রিং (১৬,৮০০ ইউরো) এবং সিট্রোয়েন ই-সি৩ (২৩,৩০০ ইউরো)। এমনকি ফক্সওয়াগনও আগামী বছর ২৫,০০০ ইউরোর নিচে নতুন আইডি.পোলো মডেল আনতে যাচ্ছে।
তবুও, কিছু বিশেষজ্ঞের মতে টেসলার নতুন মডেল ওয়াই বিওয়াইডির সেরা বিক্রিত সিল প্লাগ-ইন হাইব্রিডের তুলনায় কিছুটা সাশ্রয়ী হতে পারে। সেপ্টেম্বর মাসে টেসলা তাদের মডেল ওয়াই-এর ইন্টেরিয়র ও এক্সটেরিয়র আপডেট দেয়, যা ইউরোপের কিছু বাজারে বিক্রি স্থিতিশীল করতে সাহায্য করেছে এবং তৃতীয় প্রান্তিকে রেকর্ড পরিমাণ বৈশ্বিক ডেলিভারি অর্জনে ভূমিকা রেখেছে।
তবুও বিশ্লেষকরা বলছেন, টেসলার মডেল লাইনআপ এখন পুরনো হয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ ব্যাপক বাজারের জন্য নতুন মডেল হিসেবে মডেল ওয়াই এসেছে ২০২০ সালে।
অটোমোটিভ বিশ্লেষকরা মনে করেন, সস্তা মডেলগুলো আগামী বছর কিছুটা গতি আনতে পারে, কিন্তু ইউরোপের বাজার আরও ভিড় জমাবে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী বছর ইউরোপে ২৫টিরও বেশি নতুন ইভি মডেল বাজারে আসবে, আর ২০২৭ সালের মধ্যে আরও ডজনখানেক যোগ হবে।
অটোফোরকাস্ট সলিউশনসের অনুমান, বর্তমান মূল্যে টেসলার মডেল ওয়াই ইউরোপে বিক্রি ধরে রাখতে সহায়তা করতে পারে। কিন্তু বাজারে একে “বিপ্লবী পরিবর্তন” হিসেবে দেখা হবে না, কারণ ৩০,০০০ ইউরোর নিচে দামের গাড়ির প্রভাব এখন সবচেয়ে বেশি।



