ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউব সম্প্রতি চালু করেছে স্বয়ংক্রিয় অডিও ফিচার, যা মূলত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) মাধ্যমে ভিডিওর ভাষা অনুবাদ করে শোনায়। তবে এই নতুন সুবিধা অনেক ব্যবহারকারীর কাছে কাঙ্ক্ষিত অভিজ্ঞতা এনে দিতে পারেনি, বরং তা অনেকের জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছে।
সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, ইউটিউবে বাংলা, হিন্দি বা অন্যান্য স্থানীয় ভাষার ভিডিও দেখার সময় তা ইংরেজিতে বাজছে। ভিডিওর চরিত্ররা মূল ভাষার বদলে হঠাৎ ইংরেজিতে কথা বলতে শুরু করছে। এর ফলে ভিডিওর ঠোঁটের নড়াচড়ার সঙ্গে ভাষার মিল থাকে না, যা দর্শকের জন্য এক ধরনের বিভ্রান্তিকর অভিজ্ঞতা তৈরি করছে।
ইউটিউবের এই নতুন ফিচারটি মূলত ব্যবহারকারীদের জন্য সহজবোধ্য ও বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতা তৈরি করার উদ্দেশ্যে যুক্ত করা হয়। কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় তৈরি কণ্ঠে মানুষের স্বাভাবিক আবেগ, ভঙ্গি বা টোন প্রতিফলিত হয় না। ফলে এই কণ্ঠ অনেকের কাছেই যান্ত্রিক ও নিরুত্তাপ মনে হয়। দর্শকেরা অভিযোগ করছেন, এতে ভিডিওর স্বাভাবিক ছন্দ ও আবহ নষ্ট হয়ে যায়, এবং তারা কনটেন্টের অনুভূতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতিমধ্যে এই ফিচার নিয়ে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ইউটিউবের এই পরিবর্তন ভিডিওর আসল সৌন্দর্য নষ্ট করছে। কেউ কেউ বলছেন, মূল ভাষার স্বর ও আবেগ না থাকলে কনটেন্টের আবেদন হারিয়ে যায়।
তবে ব্যবহারকারীরা চাইলে এই স্বয়ংক্রিয় অডিও ফিচার বন্ধ করতে পারেন। ভিডিও চালুর পর ডান দিকের তিনটি ডট আইকনে ক্লিক করে “অডিও ট্র্যাক” অপশন থেকে ভিডিওর মূল ভাষা নির্বাচন করা সম্ভব। এর ফলে ভিডিওটি তার আসল ভাষায় ফিরে যাবে। একইভাবে, অনেক সময় স্বয়ংক্রিয় সাবটাইটেল বা ক্যাপশনেও ভুল শব্দ কিংবা সময়ের অসামঞ্জস্য দেখা দেয়—যা চাইলে সেটিংস থেকে বন্ধ করা যায়।
ইউটিউব জানিয়েছে, তারা নিয়মিতভাবে ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা উন্নত করার জন্য কাজ করছে। প্ল্যাটফর্মটি তাদের ওয়েব ও মোবাইল প্লেয়ারে সম্প্রতি কিছু সূক্ষ্ম পরিবর্তন এনেছে। নতুন ডিজাইন আরও দৃষ্টিনন্দন, পরিচ্ছন্ন ও ব্যবহারবান্ধব হয়েছে। শর্টস দেখা, গান শোনা এবং ভিডিও প্লেব্যাকের অভিজ্ঞতা উন্নত করতে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
তবে, ব্যবহারকারীরা মনে করছেন, প্রযুক্তির উন্নয়ন সব সময়ই সুবিধাজনক না-ও হতে পারে। বিশেষত, যেখানে মানুষের কণ্ঠ, অনুভূতি ও ভাষার স্বাভাবিক প্রবাহ প্রয়োজন, সেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কণ্ঠ সেই জায়গাটি পূরণ করতে পারছে না। অনেকেই আশা করছেন, ইউটিউব ভবিষ্যতে এই ফিচারটি আরও উন্নত করবে, যাতে এটি ভিডিওর মূল আবেগ ও ভাষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।
বর্তমানে ভিডিও দেখার প্রবণতা বিশ্বজুড়ে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সঙ্গে ব্যবহারকারীরা প্রত্যাশা করছেন একটি আরও প্রাকৃতিক, আবেগপূর্ণ ও বাস্তব অভিজ্ঞতা—যা কেবল প্রযুক্তির সুবিধা নয়, বরং অনুভূতিরও সঠিক প্রকাশ ঘটাবে।



