ইংল্যান্ডের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় আসছে বড় পরিবর্তন। ২০২৬ সাল থেকে দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে টিউশন ফি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এবার থেকে প্রতিবছর মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে টিউশন ফি বৃদ্ধি পাবে। দেশটির শিক্ষামন্ত্রী এক ঘোষণায় জানিয়েছেন, আগামী দুই বছর পর্যন্ত এই নীতিমালা কার্যকর থাকবে এবং পরবর্তীতে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রতি বছর বাস্তবায়িত হবে। একইসঙ্গে, শিক্ষার্থীদের জন্য রক্ষণাবেক্ষণ ঋণ বা মেইনটেন্যান্স লোনও মূল্যস্ফীতির হারে বাড়বে।
সাম্প্রতিক সংসদ অধিবেশনে মন্ত্রী জানান, আসন্ন সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া শিক্ষাবর্ষসহ পরবর্তী দুই বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর টিউশন ফি মুদ্রাস্ফীতির হারে বৃদ্ধি পাবে। তবে এই সুযোগ সব প্রতিষ্ঠানের জন্য উন্মুক্ত থাকবে না। কেবলমাত্র সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ই ফি বাড়াতে পারবে, যারা সরকারের নির্ধারিত কঠোর মানদণ্ড পূরণ করবে। এর মধ্যে থাকবে উচ্চমানের পাঠদান নিশ্চিত করা, শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত সহায়তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং সার্বিকভাবে ভালো ফলাফল অর্জন করা।
সরকারের প্রকাশিত নতুন ‘পোস্ট-১৬ এডুকেশন অ্যান্ড স্কিলস হোয়াইট পেপার’-এ বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে টিউশন ফি প্রতিবছর স্বয়ংক্রিয়ভাবে সমন্বয় করা হবে। তবে এই সমন্বয়ের হার নির্ভর করবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা মান, শিক্ষার্থীদের পারফরম্যান্স এবং সার্বিক দক্ষতা উন্নয়নের ওপর।
মন্ত্রী জানান, “বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি সর্বোচ্চ ফি নিতে চায়, তবে তাদেরকেও দিতে হবে বিশ্বমানের শিক্ষা ও সুবিধা। শিক্ষার মান উন্নয়নে এবং শিক্ষার্থীদের অর্থের সঠিক মূল্য নিশ্চিত করতে সরকার প্রয়োজনীয় সংস্কার করছে।”
ইতিমধ্যে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ইংল্যান্ডে টিউশন ফি ১০ বছর পর প্রথমবারের মতো বৃদ্ধি পেয়েছে। নতুন এই বৃদ্ধির ফলে শিক্ষার্থীপ্রতি বার্ষিক গড় ফি দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯ হাজার ৫৩৫ পাউন্ডে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সতর্ক করে মন্ত্রী আরও বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান মানসম্পন্ন শিক্ষা দিতে ব্যর্থ হবে, তারা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায় করতে পারবে না। অর্থাৎ, মান বজায় রাখলেই কেবল ফি বৃদ্ধির সুযোগ মিলবে।
শিক্ষাবিদদের মতে, এই নতুন নীতিমালা ইংল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য একদিকে যেমন শিক্ষার মান উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে, অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের আর্থিক পরিকল্পনার ওপরও প্রভাব ফেলবে। তবে সরকারের দাবি, এই পরিবর্তনের মাধ্যমে শিক্ষার গুণগত মান আরও বৃদ্ধি পাবে এবং শিক্ষার্থীরা তাদের বিনিয়োগের যথাযথ মূল্য পাবেন।
অন্যদিকে, শিক্ষার্থী সংগঠনগুলোর দাবি, টিউশন ফি বৃদ্ধির কারণে নিম্নবিত্ত শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চশিক্ষা আরও কঠিন হয়ে পড়তে পারে। যদিও সরকার বলছে, মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ঋণ সুবিধা বাড়ানো হলে শিক্ষার্থীরা এর প্রভাব অনেকটাই সামলাতে পারবে।
সব মিলিয়ে, ২০২৬ সাল থেকে ইংল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর টিউশন ফি-তে আসছে নিয়মিত পরিবর্তনের নতুন যুগ, যেখানে মান বজায় রাখাই হবে মূল চাবিকাঠি।



