যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামা অঙ্গরাজ্যে সাম্প্রতিক সময়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া কয়েকজন বন্দির শরীরে অবৈধ মাদকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। টক্সিকোলজি রিপোর্টে এসব তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পর দেশজুড়ে কারাগারের নিরাপত্তা ও মাদক প্রবেশের উৎস নিয়ে তীব্র প্রশ্ন উঠছে।
আলাবামায় ২০২৩ সালে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু হয়, যখন দীর্ঘ সময় তা বন্ধ ছিল ব্যর্থ লেথাল ইনজেকশনের কারণে। তারপর থেকে ১১ জন বন্দিকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। এদের মধ্যে চারজনের শরীরে মৃত্যুর সময় মাদক পাওয়া গেছে।
৩৬ বছর বয়সী এক বন্দি, যিনি ২০১৬ সালে পাঁচজনকে হত্যা করেছিলেন, মৃত্যুর আগে দীর্ঘদিন মেথঅ্যামফেটামিন আসক্ত ছিলেন। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার সময়ও তার শরীরে মেথ পাওয়া যায়। তিনি একাধিকবার স্বীকার করেছিলেন যে, তার আসক্তিই হত্যাকাণ্ড ঘটানোর মূল কারণ ছিল।
অন্যদিকে, ৫০ বছর বয়সী আরেকজনের শরীরেও মৃত্যুর সময় মেথ পাওয়া যায়। একইভাবে, আরও দুই বন্দির দেহে কৃত্রিম ক্যানাবিনয়েড নামক মাদকের উপস্থিতি শনাক্ত হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, যদিও মাত্রা তুলনামূলক কম ছিল, তারপরও এটি প্রমাণ করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগেই তারা এসব মাদক গ্রহণ করেছিলেন।
একজন সাবেক সংশোধনাগার প্রধান বলেন, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দিদের দেহে এ ধরনের অবৈধ মাদক পাওয়া গেলে তা বড় ধরনের সতর্ক সংকেত হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত। বিষয়টি প্রমাণ করে, নিরাপত্তার ফাঁকফোকর দিয়ে কারাগারে মাদক প্রবেশ করছে এবং সেগুলো বন্দিদের কাছে পৌঁছাচ্ছে।
আলাবামার কারাগারগুলোতে কর্মচারী ও দর্শনার্থীদের মাধ্যমে মাদক প্রবেশের ঘটনা আগেও ধরা পড়েছে। কখনও কারারক্ষীরা বড় পরিসরে মাদক চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন, আবার কখনও দর্শনার্থীরা বা ড্রোনের মাধ্যমে ব্যাগভর্তি মাদক ভেতরে পাঠানোর চেষ্টা করেছেন।
২০২৩ সালে আলাবামার কারাগারে বন্দিদের মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ২৭৭ জন, যার মধ্যে ৪৬ জনই অতিরিক্ত মাত্রায় মাদক সেবন বা ওভারডোজে মারা গেছেন। এ পরিসংখ্যান রাজ্যের কারাগারে মাদক সমস্যার ভয়াবহতা স্পষ্ট করে।
মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগে বন্দিদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার নিয়ম থাকলেও সেখানে আসলেই মাদক পরীক্ষা হয় কিনা, সে বিষয়ে সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট করে কিছু জানায়নি। এক মামলার শুনানিতে রাজ্যের কারা কমিশনার স্বীকার করেন, কারাগারে মাদক প্রবেশ করছে এবং অনেক সময় কর্মচারীরাই তা ভেতরে নিয়ে আসছে।
এমনকি একটি মামলায় প্রমাণ পাওয়া যায়, এক বন্দি মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগ মুহূর্তেও মাদক সেবন করেছিলেন, যদিও তিনি নির্জন কক্ষে এবং সর্বোচ্চ নিরাপত্তার মধ্যে ছিলেন। এতে স্পষ্ট হয় যে, নিরাপত্তার ব্যবস্থায় বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দিদের জন্যও কারাগারে পুনর্বাসন ও সঠিক সহায়তা নেই। ফলে তারা হতাশ হয়ে মাদকের দিকে ঝুঁকছে। মাদক শুধু বন্দিদের মনস্তাত্ত্বিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে না, বরং পুরো কারা ব্যবস্থার ব্যর্থতাকেও উন্মোচিত করছে।
একটি ফেডারেল মামলা এখনো চলমান রয়েছে, যেখানে আলাবামার কারাগারগুলোর দুর্নীতি, সহিংসতা, যৌন নির্যাতন এবং অনিরাপদ পরিবেশের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই মামলাতেও স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, কারাগারে অবৈধ মাদকের অবাধ প্রবেশ বন্দিদের জীবনকে আরও বিপজ্জনক করে তুলছে।
মাদক আসক্তির কারণে এক বন্দির স্বীকারোক্তি ছিল— “ড্রাগ আমাকে সহিংস ও অস্থিতিশীল করে তুলেছিল। আমি আসলে সে মানুষ নই, যাকে মানুষ অপরাধী হিসেবে দেখে।” বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘমেয়াদি মাদকাসক্তি মানসিক রোগের পর্যায়ে পৌঁছে যায় এবং তা একজন মানুষকে বিভ্রান্তি ও হ্যালুসিনেশনে ঠেলে দেয়।
সব মিলিয়ে, মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগ মুহূর্তে বন্দিদের দেহে মাদক পাওয়া যাওয়ার ঘটনাগুলো আলাবামার কারাগার ব্যবস্থার গভীর সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির কারণে এই সংকট আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।