Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeখেলার জগৎআর্থিক দাপটে শীর্ষে রোনালদো, তরুণ ইয়ামালের উত্থানে বদলাচ্ছে ফুটবলের চিত্র

আর্থিক দাপটে শীর্ষে রোনালদো, তরুণ ইয়ামালের উত্থানে বদলাচ্ছে ফুটবলের চিত্র

ফুটবলের মাঠে বয়স কেবল সংখ্যামাত্র—এ প্রবাদটি আবারও সত্যি করলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। ৪০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো যেমন গোলের সামনে অপ্রতিরোধ্য, তেমনি অর্থ আয়ের দিকেও অপরাজিত তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ব্যবসা সাময়িকীর সাম্প্রতিক প্রতিবেদন বলছে, ২০২৫ সালে বিশ্বের সর্বোচ্চ আয়কারী ফুটবলারের তালিকায় আবারও শীর্ষে রয়েছেন এই পর্তুগিজ কিংবদন্তি।

ফুটবলের ইতিহাসে প্রথম বিলিয়নিয়ার খেলোয়াড় হিসেবে নিজের অবস্থান আরও মজবুত করলেন তিনি। গত এক দশকে এ নিয়ে ষষ্ঠবারের মতো ফোর্বসের বার্ষিক তালিকায় শীর্ষস্থান দখল করলেন রোনালদো, যা নিজেই এক রেকর্ড।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২৫–২৬ মৌসুমে ফুটবলারদের সম্মিলিত আয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯৪ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার—বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১১ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা। এই বিশাল অঙ্কের মধ্যেই সবচেয়ে বড় অংশটি রোনালদোর পকেটে যাবে। সৌদি ক্লাব আল নাসরের সঙ্গে তাঁর নতুন চুক্তি অনুযায়ী শুধু ক্লাব থেকেই তিনি আয় করবেন ২৩ কোটি ডলার।

তবে এখানেই শেষ নয়—নাইকি, বিনান্স ও হারবালাইফসহ একাধিক আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের সঙ্গে স্পনসরশিপ থেকে আরও ৫ কোটি ডলার যুক্ত হবে তাঁর আয়ে। সব মিলিয়ে এই মৌসুমে রোনালদোর মোট আয় দাঁড়াবে ২৮ কোটি ডলার।

ফোর্বসের তথ্য অনুসারে, ১৯৯০ সাল থেকে যেসব খেলোয়াড়ের আয় নিয়মিতভাবে পর্যালোচনা করা হয়, তাঁদের মধ্যে এক বছরে রোনালদোর চেয়ে বেশি আয় করেছেন কেবল সাবেক বক্সার ফ্লয়েড মেওয়েদার—২০১৫ সালে ৩০ কোটি এবং তিন বছর পর ২৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার।

তবে এবারের তালিকার সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো তরুণদের উত্থান। বার্সেলোনার ১৮ বছর বয়সী লামিনে ইয়ামাল সর্বোচ্চ আয়কারীদের শীর্ষ দশে জায়গা করে নিয়েছেন। গত মৌসুমে ১৮ গোল এবং ২৫টি গোল অ্যাসিস্ট করে আলোচনায় আসা এই তরুণ উইঙ্গার এখন স্পনসরদেরও প্রিয় মুখ। অ্যাডিডাস, কোনামি ও পাওয়ারেডের সঙ্গে তাঁর চুক্তি মিলিয়ে ইয়ামালের আয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

একইভাবে দেখা যায়, এ তালিকায় থাকা শীর্ষ ১০ ফুটবলারের মধ্যে ৫ জনের বয়স ২৯ বা তার নিচে। অর্থাৎ, রোনালদো এখনো রাজত্ব করলেও তাঁর উত্তরসূরিরা ইতিমধ্যেই মঞ্চে নিজেদের জায়গা পাকা করছেন।

শীর্ষস্থানে থাকা রোনালদোর পরেই রয়েছেন ইন্টার মায়ামির আর্জেন্টাইন তারকা, যার আয় প্রায় ১৩ কোটি ডলার। তৃতীয় স্থানে আছেন সৌদি প্রো লিগের আল ইত্তিহাদের ফরোয়ার্ড, যার আয় ১০ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এর পরেই রিয়াল মাদ্রিদের কিলিয়ান এমবাপ্পে—প্রায় ৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার আয় নিয়ে। পঞ্চম স্থানে ম্যানচেস্টার সিটির আরলিং হলান্ড, যার আয় ৮ কোটি ডলার।

হলান্ডের আয় বাড়িয়েছে তাঁর নবমেয়াদি নতুন চুক্তি—যার মাধ্যমে তিনি বেতন ও বোনাস হিসেবে বছরে ৬ কোটি ডলার পাবেন, সঙ্গে মাঠের বাইরে স্পনসরশিপ থেকে আরও ২ কোটি ডলার যুক্ত হবে।

গত মৌসুমে এই তালিকার দশম স্থানে ছিলেন ম্যানচেস্টার সিটির কেভিন ডি ব্রুইনে, কিন্তু এ বছর তাঁর আয় প্রায় ৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৯০ লাখ ডলারে। বিপরীতে, তালিকায় জায়গা হারিয়েছেন নেইমার। গত মৌসুমে তাঁর আয় ছিল ১১ কোটি ডলার—এর বেশির ভাগ এসেছিল সৌদি ক্লাব আল হিলালের চুক্তি থেকে। কিন্তু চুক্তি বাতিল করে ব্রাজিলের ক্লাব সান্তোসে ফেরার পর তাঁর বেতন উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ফোর্বসের হিসাব অনুযায়ী, এখন তাঁর বার্ষিক আয় প্রায় ৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার।

এই তালিকায় স্প্যানিশ লা লিগার প্রভাব স্পষ্ট। রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা মিলিয়ে চারজন খেলোয়াড় স্থান পেয়েছেন—যার মধ্যে তিনজন রিয়ালের। সৌদি প্রো লিগ থেকেও রয়েছেন তিনজন, প্রিমিয়ার লিগ থেকে দুইজন এবং এমএলএস থেকে রয়েছেন একজন তারকা খেলোয়াড়।

ফুটবলে টাকার এই প্রবল স্রোত যেমন বাড়ছে, তেমনি তরুণ প্রজন্মের উত্থান নতুন এক যুগের ইঙ্গিত দিচ্ছে। রোনালদো এখনো আর্থিকভাবে সবার ওপরে, কিন্তু ফুটবলের আগামী গল্পটা হয়তো ইয়ামাল, বেলিংহাম বা হলান্ডদের হাতেই লেখা হবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments