আরব ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলো যদি একযোগে ইসরায়েলের জন্য আকাশপথ বন্ধ করে দেয়, তবে এর প্রভাব ইসরায়েলের অর্থনীতি, রাজনীতি ও নিরাপত্তার ওপর ভয়াবহভাবে পড়তে পারে। এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কাতারের দোহায় ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলা এমন সিদ্ধান্তের অনুঘটক হয়ে দাঁড়াতে পারে। ওই হামলায় ছয়জন নিহত হন, যার মধ্যে একজন ছিলেন কাতারের নিরাপত্তা কর্মকর্তা। এ ঘটনার পর ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) ও আরব লীগ জরুরি বৈঠক ডেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছে।
গবেষণার বিশ্লেষণে উল্লেখ করা হয়, আকাশপথ অবরোধ কার্যকর হলে ইসরায়েলের জিডিপি ৪ দশমিক ৮ থেকে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। এতে দেশটি অর্থনৈতিক মন্দার মুখে পড়বে। তুরস্ক, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ার মতো ওআইসির বড় সদস্যরা অবরোধে যোগ দিলে ইসরায়েল এশিয়া ও আফ্রিকার বাজারের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ হারাবে। বিকল্প রুটে ফ্লাইট পরিচালনায় প্রতি ফ্লাইটের খরচ ৩০ থেকে ৬০ হাজার ডলার পর্যন্ত বাড়বে, আর এতে ইসরায়েলের প্রধান এয়ারলাইন এল-আলের আয়ে ৬০ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত পতন ঘটতে পারে।
পর্যটনশিল্প, হীরা ও চিকিৎসা সরঞ্জামের মতো রপ্তানি খাতও ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক চুক্তি বাতিল এবং গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রম অন্য দেশে সরিয়ে নেওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে। প্রতিবেদনে বলা হয়, এটি শুধু অর্থনৈতিক চাপই নয়; বরং পুরো অঞ্চলের ভূরাজনীতিকে নতুন আকার দেবে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, এ ধরনের অবরোধ শান্তি ও পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের মাঝামাঝি এক ধরনের চাপ সৃষ্টিকারী পদক্ষেপ। যদি ইসরায়েল জোর করে অবরোধ ভাঙতে চায়, তবে আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকি বাড়বে। তবে বাস্তবে এমন সমন্বিত অবরোধ আরোপের সম্ভাবনা কম বলেও প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, আরব দেশগুলো একসঙ্গে হলে এটি ইসরায়েলের জন্য বড় ধরনের চাপ হয়ে দাঁড়াবে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রকেও কূটনৈতিক সংকটে ফেলবে। কারণ, একদিকে তাদের ইসরায়েলকে রক্ষা করতে হবে, অন্যদিকে আরব দেশগুলোর সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব বজায় রাখতে হবে।
এমন সময়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, দেশটিকে স্বনির্ভর অর্থনীতির দিকে যেতে হবে এবং নিজেদের অস্ত্রশিল্প গড়ে তুলতে হবে। তিনি ইসরায়েলকে একই সঙ্গে জ্ঞান ও গবেষণার কেন্দ্র এবং শক্তিশালী সামরিক শক্তি হয়ে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে, আরব বিশ্বের প্রভাবশালী মহল বলছে, এক হয়ে দাঁড়ালে রক্তপাত ছাড়াই ইসরায়েলের ওপর কার্যকর চাপ সৃষ্টি সম্ভব।