যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলে খাবারের স্বাদ যেমন আলাদা, তেমনি আলাদা তাদের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্ন। একেক রাজ্যে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তৈরি হওয়া কিছু ডেজার্ট শুধু খাবার নয়, বরং স্থানীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠেছে। কোথাও একটি মিষ্টির জন্ম নিয়ে রয়েছে প্রতিযোগিতামূলক দাবি, কোথাও আবার সেই মিষ্টি ঘিরে হয়েছে আইনি লড়াই। ভ্রমণকারীদের জন্য এসব ডেজার্ট হয়ে ওঠে নির্দিষ্ট এলাকার স্বাদ চেনার সহজ পথ।
নিউ ইংল্যান্ড ও পেনসিলভানিয়ায় জনপ্রিয় হুপপি পাইয়ের উৎপত্তি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক রয়েছে। চকলেট কেকের মতো নরম দুটি কুকির মাঝে ক্রিম ভর্তি এই মিষ্টির জন্ম কোথায়, তা নিয়ে ভিন্নমত দেখা যায়। এক পক্ষের দাবি, এটি পেনসিলভানিয়ার আমিশ সম্প্রদায়ের রান্নাঘর থেকে এসেছে। অন্যদিকে নিউ ইংল্যান্ডের একটি বেকারির ইতিহাস ঘেঁটে বলা হয়, বিশ শতকের শুরুর দিকে সেখানেই প্রথম এটি বিক্রি হয়। পরে এক রাজ্য এই মিষ্টিকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজ্যস্বীকৃত খাবারের মর্যাদা দেয়।
দক্ষিণাঞ্চলের আলাবামা রাজ্যের নিজস্ব পরিচয়ের অংশ লেন কেক। স্তরযুক্ত এই কেকের ভেতরের পুরে থাকে মাখন, কিশমিশ এবং অল্প পরিমাণে মদজাত উপাদান। উনিশ শতকের শেষ দিকে একজন গৃহিণীর রেসিপি বইয়ে এটি প্রথম লিপিবদ্ধ হয়। পরবর্তীকালে দক্ষিণী সাহিত্যেও এই কেকের উল্লেখ দেখা যায়, যা একে আরও পরিচিত করে তোলে।
ওরেগনের মারিয়ন কাউন্টির নামে নামকরণ করা মারিয়নবেরি থেকে তৈরি পাই স্থানীয়দের গর্ব। দুটি ভিন্ন জাতের ব্ল্যাকবেরি সংকর করে তৈরি এই ফলের স্বাদ টক আর মিষ্টির ভারসাম্যে ভরপুর। গ্রীষ্মকালে বেকারিগুলোতে এই পাইয়ের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে, কারণ ফলটি পাওয়া যায় স্বল্প সময়ের জন্য।
ফ্লোরিডার কি লাইম পাই যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে পরিচিত হলেও এর সঙ্গে রাজ্যটির সম্পর্ক বিশেষভাবে গভীর। ছোট আকারের টক লেবু, মিষ্টি কনডেন্সড দুধ আর বিস্কুটের খোসা দিয়ে তৈরি এই পাই বহু বছর ধরে উপকূলীয় শহরের পরিচিত খাবার। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উপাদানে কিছু পরিবর্তন এলেও এর জনপ্রিয়তা কমেনি।
মিসৌরির সেন্ট লুইস অঞ্চলে জন্ম নেওয়া গুই বাটার কেকের গল্প শুরু হয় একটি ভুল থেকে। কেক বানানোর সময় উপকরণের পরিমাণ ঠিক না হওয়ায় তৈরি হয় ঘন ও আঠালো কেন্দ্রযুক্ত এক নতুন স্বাদ। পরে সেটিই হয়ে ওঠে স্থানীয় প্রিয় মিষ্টি।
হাওয়াইয়ের শেভ আইস আসলে অভিবাসী শ্রমিকদের হাত ধরে আসা একটি ডেজার্ট। বরফের নরম স্তরে ঢালা হয় বিভিন্ন স্বাদের সিরাপ। সঙ্গে যোগ করা যায় কনডেন্সড দুধ বা আইসক্রিম, যা একে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।
কেন্টাকির একটি চকলেট ও আখরোটের পাই নাম ব্যবহার নিয়ে আইনি বিতর্কের জন্ম দেয়। একটি বেকারি নির্দিষ্ট নামের ওপর একচ্ছত্র অধিকার দাবি করে আদালতের দ্বারস্থ হয়। শেষ পর্যন্ত সংবাদপত্রের সঙ্গে আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে বিষয়টি আলোচনায় আসে, আর পাইটি আরও বেশি পরিচিতি পায়।
নর্থ ক্যারোলাইনা ও পেনসিলভানিয়ায় জনপ্রিয় মোরাভিয়ান সুগার কেক মূলত ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী রেসিপি। শতাব্দীপ্রাচীন এই কেক ছুটির দিনের নাশতা কিংবা কফির সঙ্গে খাওয়ার জন্য আদর্শ।
ওহাইওর বাকাইস নামের মিষ্টি চকলেট ও পিনাট বাটারের সহজ মিশ্রণ। ছোট আকারের এই মিষ্টি খেলাধুলার আসরে ভাগাভাগি করতে করতেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
ম্যাসাচুসেটসের বোস্টন ক্রিম পাই দেখতে কেকের মতো হলেও নামের সঙ্গে পাই শব্দটি জুড়ে আছে। কেকের স্তরের মাঝে ক্রিম আর ওপরে চকলেটের আস্তরণ একে আলাদা করে চেনায়।
লুইজিয়ানার কলা দিয়ে তৈরি বানানাস ফস্টার আগুনে ফ্ল্যাম্বে করে পরিবেশন করা হয়। রেস্তোরাঁয় অতিথিদের সামনে এই প্রক্রিয়া দেখানোই এর আকর্ষণের বড় অংশ।
মেরিল্যান্ডের স্মিথ আইল্যান্ড কেক বহু পাতলা স্তরের জন্য পরিচিত। সমুদ্রবেষ্টিত ছোট দ্বীপ থেকে আসা এই কেক রাজ্য স্বীকৃতি পাওয়ার পর দেশজুড়ে জনপ্রিয়তা পায়।
দক্ষিণের বিভিন্ন রাজ্যে নারকেল কেক দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য। উনিশ শতক থেকেই এই কেক উৎসব ও পারিবারিক অনুষ্ঠানের অংশ।
নিউ মেক্সিকোর বিসকোচিতোস দারুচিনি আর মৌরির স্বাদের কুকি, যা উৎসব আর বিয়েতে বিশেষভাবে পরিবেশন করা হয়।
সবশেষে টেক্সাস শিট কেক, আকারে বড় এবং সাধারণত সামাজিক আয়োজন বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হয়। কেক ও ফ্রস্টিং দুটোতেই কোকোর স্বাদ স্পষ্ট।
এই মিষ্টান্নগুলো শুধু স্বাদের জন্য নয়, বরং প্রতিটি অঞ্চলের ইতিহাস ও পরিচয়ের প্রতীক হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্যসংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে।



