আমেরিকার বৃহত্তম যুদ্ধজাহাজ ক্যারিবিয়ান সাগরে প্রবেশ করতেই ভেনেজুয়েলা ঘোষণা করেছে ব্যাপক সামরিক প্রস্তুতির। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সেনা, নৌ, বিমান এবং রিজার্ভ বাহিনী একযোগে সামরিক মহড়ায় অংশ নেবে, যা চলবে বুধবার পর্যন্ত।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এক বিবৃতিতে জানান, এই মহড়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশের কমান্ড, নিয়ন্ত্রণ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করা এবং ভেনেজুয়েলার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রস্তুতি নিশ্চিত করা। তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রপতির নির্দেশেই এই মহড়া পরিচালিত হচ্ছে, যা বিদেশি “সাম্রাজ্যবাদী হুমকির” জবাব হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
নিয়মিত বাহিনীর পাশাপাশি এই মহড়ায় অংশ নিচ্ছে বলিভারিয়ান মিলিশিয়া—একটি বেসামরিক রিজার্ভ ফোর্স, যা প্রয়াত প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং দক্ষিণ আমেরিকার স্বাধীনতার মহানায়ক সিমন বলিভারের নামে নামকরণ করা হয়।
এই ঘোষণা আসে এমন এক সময়, যখন যুক্তরাষ্ট্র অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়েছে। মার্কিন নৌবাহিনীর বৃহত্তম বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ “USS Gerald R. Ford” সম্প্রতি লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ কমান্ড এলাকায় প্রবেশ করেছে। এর সঙ্গে রয়েছে নয়টি এয়ার স্কোয়াড্রন, দুটি গাইডেড মিসাইল ডেস্ট্রয়ার, একটি ইন্টিগ্রেটেড এয়ার অ্যান্ড মিসাইল ডিফেন্স কমান্ড জাহাজ এবং ৪,০০০-এরও বেশি নাবিক।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই বাহিনী মোতায়েনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মাদক চোরাচালান প্রতিরোধ এবং অবৈধ নৌকার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী বিভিন্ন মাদকবাহী নৌকায় হামলা চালিয়েছে। তবে ভেনেজুয়েলা এই যুক্তিকে বিশ্বাস করছে না। দেশটির কর্মকর্তারা মনে করছেন, এটি মূলত সরকার পরিবর্তনের এক রাজনৈতিক কৌশল, যা বিদেশি প্রভাব বিস্তারের অংশ।
গত মাসে মার্কিন নেতৃত্ব ঘোষণা দেন যে, তিনি গোয়েন্দা সংস্থাকে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দিয়েছেন। এমনকি তিনি দেশটির অভ্যন্তরে সামরিক অভিযান চালানোর সম্ভাবনাও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, যদিও পরে তা অস্বীকার করা হয়।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর মতে, বর্তমান সামরিক প্রস্তুতি “ইনডিপেনডেন্স প্ল্যান ২০০”–এর অংশ। এটি একটি নাগরিক-সামরিক সমন্বিত পরিকল্পনা, যার মাধ্যমে দেশের সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং মিলিশিয়াদের একত্রে কাজ করার সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে।
ভেনেজুয়েলার নিয়মিত সশস্ত্র বাহিনীতে বর্তমানে প্রায় ১ লাখ ২৩ হাজার সদস্য রয়েছে। রাষ্ট্রপ্রধান দাবি করেছেন, স্বেচ্ছাসেবী মিলিশিয়ায় এখন ৮০ লাখেরও বেশি রিজার্ভ সদস্য যুক্ত হয়েছেন। তবে বিশ্লেষকরা এই সংখ্যা ও প্রশিক্ষণের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে বর্তমানে আনুমানিক ১৫,০০০ সৈন্য অবস্থান করছে। এর আগে থেকেই ওই এলাকায় ছিল মার্কিন নৌবাহিনীর “Iwo Jima Amphibious Ready Group” এবং “22nd Marine Expeditionary Unit”, যাদের মধ্যে রয়েছে ৪,৫০০-এরও বেশি সৈন্য, তিনটি গাইডেড মিসাইল ডেস্ট্রয়ার, একটি আক্রমণ সাবমেরিন, একটি স্পেশাল অপারেশন জাহাজ এবং একটি মিসাইল ক্রুজার।
এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র পুয়ের্তো রিকো দ্বীপে ১০টি F-35 যুদ্ধবিমান এবং তিনটি MQ-9 রীপার ড্রোন মোতায়েন করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, পুয়ের্তো রিকো এখন মার্কিন সামরিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রস্থল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। দ্বীপটিতে প্রায় ৫,০০০ মার্কিন সেনা অবস্থান করছে।
অক্টোবরের শেষদিকে মার্কিন বোমারু বিমান ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি প্রশিক্ষণ মিশনও সম্পন্ন করেছে। এসব পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আবারও বেড়ে উঠেছে, যা আন্তর্জাতিকভাবে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।



