নীল আকাশের নিচে উটাহর এক কলেজ ক্যাম্পাসে হাজারো শিক্ষার্থী জড়ো হয়েছিল এক জনপ্রিয় রক্ষণশীল বক্তাকে শোনার জন্য। তাঁকে ঘিরে উৎসবমুখর পরিবেশে কেউ উল্লাস করছিলেন, কেউ আবার প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন। ঠিক সেই মুহূর্তেই ভিড়ের মধ্যে হঠাৎ বন্দুকের গুলি ছুটে আসে। এক বুলেট আঘাত হানে তাঁর গলায়—আর মুহূর্তেই সবকিছু বদলে যায়।
ঘটনাটি ক্যামেরায় ধারণ হওয়ায় এর নৃশংস দৃশ্য ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। তরুণ রক্ষণশীলদের কাছে যিনি ছিলেন এক অনুপ্রেরণার প্রতীক, এখন তিনি তাঁদের কাছে শহীদে পরিণত হলেন।
৩১ বছর বয়সী এই নেতাকে ঘিরে বিতর্কের শেষ ছিল না। খোলাখুলিভাবে অস্ত্র বহনের অধিকার, রক্ষণশীল মূল্যবোধ এবং সাবেক প্রেসিডেন্টকে সমর্থনের কারণে তিনি ছিলেন আলোচিত। তাঁর সংগঠন তরুণ ভোটারদের সক্রিয় করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। সমালোচকদের বারবার সহিংস হুমকির কথা তিনি নিজেই আগেও উল্লেখ করেছিলেন।
ক্যাম্পাসের সেই তাঁবুর উপর লেখা ছিল—“প্রমাণ করো আমি ভুল।” সেই চ্যালেঞ্জের মাঝেই তিনি রক্তাক্ত হয়ে লুটিয়ে পড়েন।
যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক সহিংসতার ইতিহাস নতুন নয়। সম্প্রতি মিনেসোটায় দুই ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতাকে গুলি করা হয়, যার একজন প্রাণ হারান। গত বছর দু’বার সাবেক প্রেসিডেন্টকে হত্যার চেষ্টা হয়েছিল। এর আগে কংগ্রেস সদস্যদের ওপর গুলি চালানো থেকে শুরু করে শীর্ষ নেতাদের বাসায় হামলা—সবই যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক সহিংসতার নির্মম চিত্র তুলে ধরে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিভক্ত রাজনৈতিক পরিবেশ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভাজন সৃষ্টিকারী বক্তব্য এবং সহজে আগ্নেয়াস্ত্রের প্রাপ্যতা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলছে। প্রশ্ন উঠছে—পাবলিক লাইফ কি এখন রক্তক্ষয়ী খেলায় পরিণত হয়েছে?
সাবেক প্রেসিডেন্ট এক ভিডিও বার্তায় ঘটনাটিকে আখ্যা দিয়েছেন “অন্ধকার সময়” হিসেবে এবং প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অপরাধীদের খুঁজে বের করার। ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলো ইতোমধ্যেই প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ দাবি করছে। অপরদিকে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট উভয়পক্ষই রাজনৈতিক সহিংসতার নিন্দা জানালেও কংগ্রেসে মুহূর্তের মধ্যেই উত্তপ্ত বাক্যযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়।
উটাহতে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা এখনো শোকে কাতর। গভর্নর এক আবেগঘন বক্তব্যে বলেন, দেশের ২৫০ বছরের ইতিহাসে এমন পরিস্থিতি “ভাঙা আমেরিকার” দিকেই ইঙ্গিত করছে। তাঁর কণ্ঠে ভেসে উঠেছিল গভীর সংশয়—এই সহিংস পথেই কি এগোবে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি?