আমেরিকায় ইমিগ্রেশন অভিযানে আটক হওয়ার পর অবশেষে নিজ দেশে ফিরলেন দক্ষিণ কোরিয়ার শত শত কর্মী। শুক্রবার সিউলের ইনচন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তারা। সপ্তাহব্যাপী আটক থাকার পর দেশে ফেরা এসব কর্মীদের অভ্যর্থনা জানাতে যেমন উপস্থিত ছিল পরিবার ও সাধারণ মানুষ, তেমনি দেখা গেছে তীব্র প্রতিবাদও।
গত ৪ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ায় একটি হুন্ডাই প্রতিষ্ঠানে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ অভিযানে নেমে মোট ৪৭৫ জনকে আটক করে। এর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক ছিলেন ৩১৭ জন—৩০৭ পুরুষ এবং ১০ নারী। দক্ষিণ কোরিয়ান সরকারের চার্টার্ড বিমানে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। তাদের সাথে আরও ছিলেন চীন, জাপান ও ইন্দোনেশিয়ায় কর্মরত দক্ষিণ কোরিয়ান কোম্পানির ১৪ কর্মী। তবে একজন কর্মী যুক্তরাষ্ট্রেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
আটক কর্মীদের ফিরে আসা ঘিরে বিমানবন্দরে ছিল সাংবাদিকদের ভিড়। অনেকেই হাত নেড়ে স্বদেশিদের স্বাগত জানান। আবার কিছু প্রতিবাদকারী প্ল্যাকার্ড হাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কারও হাতে ছিল লেখা, “আমরা কি এখনো যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ চালিয়ে যাব, এই বিশ্বাসঘাতকতার পরও?”
ফিরে আসা কর্মীরা জানান, অভিযানের সময় তাদের অভিজ্ঞতা ছিল অত্যন্ত ভীতিকর। এক কর্মীর ভাষায়—“এটা যেন কোনো সিনেমার দৃশ্য ছিল। ভারী অস্ত্র, সাঁজোয়া গাড়ি দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছিল, প্রতিরোধের কোনো সুযোগ ছিল না।” আরেকজন জানান, “আটক কেন্দ্রের পরিবেশ ছিল শীতল ও কষ্টকর, তবে দেশে ফেরার পর এখন কেবল আনন্দই লাগছে।”
দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্মীদের পরিচয় গোপন রাখার নির্দেশ দিয়েছে, যাতে তাদের গোপনীয়তা রক্ষা পায়। এদিকে, বাইরে অপেক্ষমাণ ডজনখানেক বাসে করে কর্মীদের পরিবারের সাথে পুনর্মিলনের জন্য বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়।
এই ঘটনার ফলে যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষিণ কোরিয়ার বিনিয়োগে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। প্রায় ৪.৩ বিলিয়ন ডলারের ব্যাটারি কারখানা স্থাপনে কাজ পিছিয়ে যেতে পারে দুই থেকে তিন মাস। ইতোমধ্যেই হুন্ডাই ও এলজি এনার্জি সলিউশন জানায়, আটক কর্মীদের কষ্টের জন্য তারা দুঃখিত এবং ভবিষ্যতে যেন তাদের কোনো অসুবিধা না হয় সে বিষয়ে সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদেশি বিশেষজ্ঞ কর্মীরা অনেক সময় অস্থায়ী ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে কারখানার প্রযুক্তিগত কাজ করেন। এ ধরনের আকস্মিক অভিযান আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের কাছে নেতিবাচক বার্তা দেয় এবং তাদের আস্থায় আঘাত হানে।
এ ঘটনায় শুধু দক্ষিণ কোরিয়ান নয়, আরও প্রায় ১৪৫ জন লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশের নাগরিক এখনো যুক্তরাষ্ট্রে আটক রয়েছেন। আন্তর্জাতিক শ্রমিক ইউনিয়নগুলো তাদের মুক্তির দাবিও জানিয়েছে।