আর্জেন্টিনার তারকা ফুটবলার লিওনেল মেসি আন্তর্জাতিক ফুটবল ক্যারিয়ারে নতুন এক নজির সৃষ্টি করেছেন। পুয়ের্তো রিকোর বিপক্ষে অনুষ্ঠিত প্রীতি ম্যাচে মেসি দুটি গোল করানোর পাশাপাশি নতুন রেকর্ড গড়েছেন, যা তাকে আন্তর্জাতিক ফুটবলে গোল করানোর দিক থেকে শীর্ষে বসিয়েছে।
ম্যাচের আগে মেসি স্বেচ্ছায় মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আর্জেন্টিনার কোচের সঙ্গে কথা বলে তিনি জানান, তিনি পুরোপুরি প্রস্তুত। গত কয়েক সপ্তাহে মেসি ইন্টার মায়ামি ক্লাবের হয়ে ২৭ দিনে ৭টি ম্যাচ খেলেছেন, তাই জাতীয় দলের ম্যানেজমেন্ট তাঁকে যথেষ্ট বিশ্রাম দিয়েছিল। কিন্তু মেসি তার খেলার আগ্রহ ও দৃষ্টান্তমূলক নিষ্ঠা দেখিয়ে মাঠে নামেন।
ম্যাচের প্রথমার্ধে তিনি গঞ্জালো মন্তিয়েলকে দিয়ে গোল করিয়ে দেন, যা মেসির আন্তর্জাতিক ফুটবলে ৫৯তম ‘অ্যাসিস্ট’ হিসেবে রেকর্ডে নাম লিখিয়েছে। এই গোলে তিনি ব্রাজিলের তারকা ফরোয়ার্ড নেইমারের সঙ্গে সমান অবস্থানে এসেছিলেন। ম্যাচের ৮৪ মিনিটে তিনি লাওতারো মার্তিনজকে দিয়ে আরও একটি গোল করান, যা তাকে শীর্ষে তুলে ধরে। এভাবে আন্তর্জাতিক ফুটবলে গোল করানোর ক্ষেত্রে মেসি এখন নিঃসন্দেহে সবার উপরে।
মেসির পর নেইমার রয়েছেন। তৃতীয় স্থানে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ফরোয়ার্ড ল্যান্ডন ডনোভান, যিনি ৫৮টি গোল করিয়েছেন। সমান ৫৩টি করে গোল রয়েছে হাঙ্গেরি কিংবদন্তি ফেরেঙ্ক পুসকাস এবং বেলজিয়ামের কিংবদন্তি কেভিন ডি ব্রুইনার। এছাড়া ৫০টি গোল করেছেন হাঙ্গেরির আরেক কিংবদন্তি স্যান্দর ককসিস, এবং ৪৭টি গোল করেছেন কিংবদন্তি পেলে।
আর্জেন্টিনার জার্সিতে মেসির তুলনা কেউ করতে পারে না। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোল করেছেন সাবেক উইঙ্গার আনহেল দি মারিয়া, যিনি ১৪৫ ম্যাচে ২৮টি গোল করেছেন। মেসি ১৯৫ ম্যাচে ৬০টি গোলের রেকর্ড গড়েছেন। এই তালিকায় তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা, যিনি ২৬টি গোল করেছেন। এরপর আসে আর্জেন্টিনার অন্যান্য তারকা যেমন আরিয়ে ওর্তেগা (২১ গোল), হুয়ান রোমান রিকেলমে (১৭ গোল), এবং গঞ্জালো হিগুয়েইন ও সের্হিও আগুয়েরো (৯টি করে গোল)। লাওতারো মার্তিনেজকে দিয়ে মেসি ৮টি গোল করিয়েছেন।
মেসি আন্তর্জাতিক ফুটবলে গোল করানোর ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সফল ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে, যেখানে তিনি ৬টি গোল করেছেন। প্যারাগুয়ের বিপক্ষে ৫টি এবং বলিভিয়ার বিপক্ষে ৪টি গোল করেছেন।
ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে মেসির গোল সংখ্যা এখন ৩৯৮। শুধু আরও দুটি গোল করলেই তিনি চারশোর মাইলস্টোন অতিক্রম করবেন এবং হাঙ্গেরির কিংবদন্তি ফেরেঙ্ক পুসকাসকে ছাড়িয়ে যাবেন, যিনি ৪০০ গোল করেছিলেন। ৩৮ বছর বয়সী মেসির সামনে এখন এ রেকর্ড ভাঙার সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল।
মেসির এই নৈপুণ্য ও ধারাবাহিকতা ফুটবল প্রেমীদের জন্য এক আনন্দের খবর। আন্তর্জাতিক ফুটবল কেবল তার খেলার কৌশল ও দক্ষতা নয়, বরং বিশ্বব্যাপী ফুটবলারদের মধ্যে এক নতুন ইতিহাস গড়ার প্রমাণও প্রদান করছে। মেসির এই রেকর্ড শুধু তার ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, আর্জেন্টিনার জাতীয় দলের জন্যও গর্বের বিষয়।



