ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (আইবিএস) হল একটি পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা, যা পেট ফাঁপা, গ্যাস, অ্যাসিডিটি, পেটব্যথা বা কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে। যদিও স্বাস্থ্যকর জীবনধারা ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস আইবিএস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ, তবে কিছু প্রাকৃতিক সাপ্লিমেন্টও উপশমে সাহায্য করে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এই সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলে অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি সম্ভব।
১. ইসবগুল (Psyllium Husk)
ইসবগুল মূলত দ্রবণীয় ফাইবার, যা পানির সঙ্গে মিশে জেলের মতো হয়ে মলকে নরম করে। এটি ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্যের ক্ষেত্রে সহায়ক। ইসবগুলে থাকা অ্যারাবিনোক্সাইলান নামক পদার্থ প্রিবায়োটিকের মতো কাজ করে, ভালো ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ঘটায় এবং অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমকে উন্নত করে। এটি আইবিএস রোগীদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী কারণ এটি অন্ত্রের গতিশীলতা বজায় রাখে এবং স্বাভাবিক মলত্যাগে সহায়তা করে।
২. এল-গ্লুটামিন (L-Glutamine)
এল-গ্লুটামিন হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ অ্যামিনো অ্যাসিড, যা অন্ত্রের অভ্যন্তরীণ আবরণকে শক্ত রাখে। বিশেষ করে যাদের লিকি গাট বা প্রদাহ আছে, তাদের জন্য এটি খুব কার্যকর। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, আইবিএস রোগীরা দৈনিক ১৫ গ্রাম এল-গ্লুটামিন গ্রহণ করলে পেটব্যথা কমে এবং মলত্যাগের অভ্যাস স্বাভাবিক হয়। এটি মাংস, মাছ, ডিম, দুধ, ডাল, সাদা ভাত, বাঁধাকপি ও ব্রকলিতে পাওয়া যায়।
৩. প্রোবায়োটিকস (Probiotics)
প্রোবায়োটিকস হলো উপকারী ব্যাকটেরিয়া, যা অন্ত্রের স্বাভাবিক ব্যাকটেরিয়াল ভারসাম্য রক্ষা করে। এটি হজমে সহায়ক, পেট ফাঁপা কমায় এবং ডায়রিয়াতেও উপকারি। তবে আইবিএসের ধরন অনুযায়ী প্রোবায়োটিকের প্রভাব ভিন্ন হতে পারে। সব প্রোবায়োটিক একরকম নয়, তাই সঠিক প্রোবায়োটিক নির্বাচন ও মাত্রা গুরুত্বপূর্ণ। নন-ডেইরি ফারমেন্টেড খাবারেও প্রোবায়োটিক পাওয়া যায়, যেমন সয়াবিনজাত খাবার, ডাল, সিরিয়াল, ভুট্টা, জোয়ার ইত্যাদি।
৪. পিপারমিন্ট বা পুদিনা (Peppermint)
পিপারমিন্ট অন্ত্রের পেশি শিথিল করে, ফলে পেটব্যথা ও গ্যাসের সমস্যা কমে। এন্টারিক-কোটেড ক্যাপসুল আকারে গ্রহণ করলে এটি সরাসরি অন্ত্রে গিয়ে কার্যকর হয়। নিয়মিত পিপারমিন্ট সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করলে বিশেষ করে ডায়রিয়া-প্রধান আইবিএসের উপসর্গ অনেকটা কমে আসে।
প্রাকৃতিক এই সাপ্লিমেন্টগুলো চিকিৎসকের পরামর্শে গ্রহণ করলে আইবিএস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে এবং দৈনন্দিন জীবনযাত্রা অনেক সহজ হয়।