Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeসম্পাদকীয়আইনের শাসন নাকি ক্ষমতার অস্ত্র: প্রেসিডেন্টের প্রভাব বিস্তারে নতুন বিতর্ক

আইনের শাসন নাকি ক্ষমতার অস্ত্র: প্রেসিডেন্টের প্রভাব বিস্তারে নতুন বিতর্ক

দ্বিতীয় দফায় দায়িত্ব নেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট একটি সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “যে তার দেশকে রক্ষা করে, সে কোনো আইন ভঙ্গ করে না।” এই বক্তব্য অনেকের কাছে শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষ করে গত বছরের সুপ্রিম কোর্টের রায়ে রাষ্ট্রপতির ব্যাপক দায়মুক্তি পাওয়ার পর থেকে—যা অনেকে একে রাজকীয় ক্ষমতা প্রদানের সমতুল্য বলেই মনে করেন।

এই প্রেক্ষাপটে, শনিবার যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে “No Kings” শিরোনামে হাজারো মানুষ রাস্তায় নামবে বলে আশা করা হচ্ছে। নাগরিকদের এই প্রতিবাদের মূল উদ্দেশ্য হলো রাষ্ট্রপতির ক্রমবর্ধমান ক্ষমতা এবং বিচারব্যবস্থাকে রাজনৈতিক অস্ত্রে পরিণত করার প্রবণতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া।

দেশটির সাবেক গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ধীরে ধীরে এমন এক অবস্থার দিকে এগোচ্ছে যেখানে গণতান্ত্রিক কাঠামো টিকে থাকলেও বাস্তবে তা নির্বাহী ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে। তারা এই অবস্থা বোঝাতে “প্রতিযোগিতামূলক স্বৈরাচার” শব্দটি ব্যবহার করেছেন—যেখানে নির্বাচন ও আদালত থাকে, কিন্তু সেগুলোর প্রভাব সীমিত করা হয়।

বিচারব্যবস্থা শুধু গণতন্ত্রের সহায়ক উপাদান নয়, বরং এর মূল ভিত্তি। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে দেখা যাচ্ছে, প্রেসিডেন্ট বিচারব্যবস্থাকে নিজের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছেন। আদালতের রায় অগ্রাহ্য করা, জানুয়ারি ৬-এর সহিংসতায় জড়িতদের ক্ষমা করে দেওয়া, কিংবা প্রশাসনিক সীমা লঙ্ঘনের মতো পদক্ষেপগুলো দেশের আইনশাসনকে দুর্বল করছে।

সম্প্রতি, সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বল্টন-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে গোপন তথ্য অপব্যবহারের অভিযোগে। তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং একে “স্টালিন-ধারার রাজনীতি” হিসেবে অভিহিত করেছেন। গত এক মাসে এটি প্রেসিডেন্টের তৃতীয় বড় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ যিনি ফৌজদারি মামলার মুখোমুখি হলেন।

এর আগে, নিউ ইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল জেমস, যিনি একসময় প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মামলা জিতেছিলেন, তাকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে মর্টগেজ জালিয়াতির অভিযোগে। একইভাবে, সাবেক এফবিআই পরিচালক কোমি-এর বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনা হয়েছে কংগ্রেসে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার জন্য। দুইজনই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

এদিকে, প্রেসিডেন্টের এক অনিচ্ছাকৃত সামাজিক পোস্টে দেখা যায় তিনি নিজেই বন্ডি, বর্তমান অ্যাটর্নি জেনারেলকে আহ্বান করেছেন জেমস, কোমি ও এক সিনেটরের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে। সেখানে লেখা ছিল—“ওরা আমাকে দু’বার অভিশংসিত করেছে, পাঁচবার অভিযুক্ত করেছে—কোনো কারণ ছাড়াই। এখন ন্যায়বিচার হতে হবে!”

তবে বল্টনের মামলা কিছুটা ভিন্ন প্রকৃতির। এটি শুরু হয়েছিল পূর্ববর্তী প্রশাসনের সময় এবং অভিজ্ঞ এক প্রসিকিউটর এতে সই করেছিলেন। অন্যদিকে, বর্তমান প্রশাসন যখন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেগসেথ-এর সামরিক তথ্য ফাঁসের বিষয়টি উপেক্ষা করে যায়, তখন অনেকেই দ্বৈত মানদণ্ডের অভিযোগ তোলেন।

প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত বিদ্বেষ এখন রাজনৈতিক আদর্শে রূপ নিচ্ছে। তিনি প্রকাশ্যে বলেন, “আমি তোমাদের প্রতিশোধ।” সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, প্রায় এক-তৃতীয়াংশ রিপাবলিকান ভোটার মনে করেন—যারা প্রেসিডেন্টের বিরোধিতা করে, তাদের দেশ থেকে বহিষ্কার করা উচিত।

আগামী শনিবারের প্রতিবাদকে প্রশাসন ইতিমধ্যেই “শৃঙ্খলার জন্য হুমকি” হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সংকট তৈরি করে গণতন্ত্রের সীমা সংকুচিত করা এবং বিচারব্যবস্থাকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা প্রেসিডেন্টের পুরনো কৌশল।

আজ যুক্তরাষ্ট্রে প্রকৃত সংকট আইনের নয়, বরং তার প্রয়োগের—যেখানে আইন আর ক্ষমতার সীমারেখা একে অপরের বিপরীতে অবস্থান করছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments