যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার ফেডারেল আদালতে বিশ্বের অন্যতম প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপলের বিরুদ্ধে কপিরাইট লঙ্ঘনের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাটি করেছেন দুইজন স্নায়ুবিজ্ঞানী, যাঁরা দাবি করেছেন—অ্যাপল তাদের কপিরাইটযুক্ত বইসহ হাজার হাজার রচনা অবৈধভাবে ব্যবহার করেছে অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স নামে তাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) মডেল প্রশিক্ষণের জন্য।
ব্রুকলিনের একটি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদ্বয় আদালতে জানান, অ্যাপল অবৈধ অনলাইন “শ্যাডো লাইব্রেরি” বা পাইরেটেড বইয়ের ডাটাবেস থেকে তাদের রচনাগুলো সংগ্রহ করে ব্যবহার করেছে। তাঁরা মামলাটিকে একটি শ্রেণি মামলা (class action) হিসেবে দায়ের করেছেন, যাতে অনুরূপভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অন্যান্য লেখকরাও যুক্ত হতে পারেন।
প্রযুক্তি বিশ্বে এই ধরনের অভিযোগ নতুন নয়। এর আগেও ওপেনএআই, মাইক্রোসফট এবং মেটা প্ল্যাটফর্মের মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে একই ধরনের মামলা দায়ের হয়েছে। এইসব মামলা মূলত লেখক, সংবাদমাধ্যম ও সঙ্গীত কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে আনা হচ্ছে, যারা দাবি করছে—তাদের কপিরাইট করা কনটেন্ট অনুমতি ছাড়াই এআই প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এর আগে, অ্যানথ্রপিক নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান ২০২৪ সালের আগস্টে লেখকগোষ্ঠীর সঙ্গে দেড় বিলিয়ন ডলার পরিশোধে সমঝোতা করে।
নতুন মামলার বিষয়ে অ্যাপল বা বাদী পক্ষের আইনজীবীরা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে অভিযোগে বলা হয়েছে, অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স চালুর পরপরই কোম্পানির শেয়ারমূল্য হঠাৎ করে ২০০ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়—যা প্রতিষ্ঠানের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় একদিনের মূল্যবৃদ্ধি হিসেবে রেকর্ড হয়।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, অ্যাপল তাদের এআই প্রশিক্ষণের জন্য হাজার হাজার পাইরেটেড বই ও ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত কপিরাইট লঙ্ঘনকারী উপকরণ ব্যবহার করেছে। এসব উপকরণের মধ্যেই বাদীদের লেখা দুইটি বই—Champions of Illusion: The Science Behind Mind-Boggling Images and Mystifying Brain Puzzles এবং Sleights of Mind: What the Neuroscience of Magic Reveals About Our Everyday Deceptions—অন্তর্ভুক্ত ছিল বলে দাবি করা হয়েছে।
বাদী পক্ষের দাবি, তাদের কপিরাইটযুক্ত কাজ অবৈধভাবে ব্যবহার করে অ্যাপল বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হয়েছে এবং এর মাধ্যমে লেখকদের সৃষ্টিশীল অধিকার ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। তাঁরা আদালতের কাছে ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি অনুরোধ করেছেন যেন অ্যাপলকে এ ধরনের কাজ বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়।
অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স মূলত একটি এআই-চালিত ফিচার, যা আইফোন ও আইপ্যাডসহ অ্যাপলের বিভিন্ন ডিভাইসে সংযুক্ত রয়েছে। ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা উন্নত করতে এই প্রযুক্তি ভাষা প্রক্রিয়াকরণ, কনটেন্ট সাজেশন ও অটোমেটেড কাজ সম্পাদনের সুবিধা দেয়। কিন্তু এই উদ্ভাবনী প্রযুক্তির পেছনে যে তথ্য ও উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে, তা নিয়েই এখন তৈরি হয়েছে বিতর্ক।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কপিরাইট লঙ্ঘন নিয়ে এআই সংক্রান্ত এই মামলা ভবিষ্যতের প্রযুক্তি দুনিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ নজির হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। কারণ, এআই প্রশিক্ষণে ব্যবহৃত ডেটার উৎস ও অনুমতি সংক্রান্ত আইনি কাঠামো এখনও স্পষ্ট নয়। তাই এই মামলার রায় শুধুমাত্র অ্যাপলের জন্য নয়, পুরো প্রযুক্তি জগতের জন্য একটি নতুন দিকনির্দেশনা দিতে পারে।



