অ্যাটলান্টিক মহাসাগরে নতুন করে গঠিত হয়েছে ট্রপিক্যাল স্টর্ম ইমেল্ডা। রোববার থেকে শক্তি সঞ্চয় করে চলা এ ঝড়টি যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলের জন্য সম্ভাব্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে আগামী সপ্তাহে। এটি এ মৌসুমের নবম নামকৃত ঝড়।
বর্তমানে ইমেল্ডা দক্ষিণ-পশ্চিম অ্যাটলান্টিকে অবস্থান করছে এবং সোমবার পর্যন্ত উত্তরমুখী হয়ে বাহামা দ্বীপপুঞ্জের ওপর দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। সেখানে ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে ভারি বৃষ্টিপাত দেখা যাচ্ছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ঝড়টি ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল থেকে প্রায় ৩২০ মাইল দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করছে। এসময় ঝড়ে সর্বোচ্চ স্থায়ী বাতাসের গতি ঘণ্টায় প্রায় ৪০ মাইল রেকর্ড করা হয়, আর ঝড়ো দমকা হাওয়ার গতি পৌঁছায় ঘণ্টায় ৪৭ মাইল পর্যন্ত।
ঝড়ের প্রভাবে বাহামার বিভিন্ন স্থানে ইতিমধ্যেই সতর্কতা জারি করা হয়েছে। দ্বীপটির বেশিরভাগ এলাকায় ট্রপিক্যাল স্টর্ম সতর্কবার্তা কার্যকর রয়েছে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার পূর্ব উপকূলের কেন্দ্রীয় অঞ্চলেও ট্রপিক্যাল স্টর্ম ওয়াচ জারি করা হয়েছে।
এদিকে, উত্তর ও দক্ষিণ ক্যারোলিনা রাজ্যে সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভারি বৃষ্টিপাত ও বন্যার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের আগাম প্রস্তুতি নিতে আহ্বান জানানো হয়েছে।
ঝড়ের সম্ভাব্য গতিপথ
রোববার থেকে সোমবার পর্যন্ত ইমেল্ডা বাহামা হয়ে ফ্লোরিডার পূর্ব উপকূল বরাবর অগ্রসর হবে। এই সময় বাহামায় প্রবল বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ার প্রভাব স্পষ্ট থাকবে। যদিও ঝড়ের সুনির্দিষ্ট গতিপথ এখনো কিছুটা অনিশ্চিত, আবহাওয়া মডেলগুলো দেখাচ্ছে যে জর্জিয়া ও সাউথ ক্যারোলাইনা উপকূলে পৌঁছে এটি গতি কমাতে পারে। এরপর শক্তিশালী হারিকেন হামবার্তোর প্রভাবে পূর্ব দিকে সরে গিয়ে উপকূলে আঘাত হানার ঝুঁকি কমতে পারে।
ক্যারোলিনা উপকূলে সম্ভাব্য প্রভাব
আগামী মঙ্গলবার নাগাদ ইমেল্ডা জর্জিয়া ও সাউথ ক্যারোলাইনার উপকূলের কাছাকাছি অবস্থান করবে। তখন এটি শক্তিশালী ট্রপিক্যাল স্টর্ম কিংবা দুর্বল ক্যাটাগরি-১ হারিকেনে রূপ নিতে পারে বলে পূর্বাভাস রয়েছে। এ সময় ভারি বৃষ্টি, ঝড়ো বাতাস এবং উপকূলীয় জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকি তৈরি হবে।
এছাড়া আটলান্টিক উপকূলে কয়েকদিন ধরে স্থায়ী বৃষ্টিপাত দেখা দিতে পারে। জর্জিয়া থেকে শুরু করে ভার্জিনিয়া পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকায় মাঝারি মাত্রার বাতাস, বৃষ্টি ও উপকূলীয় প্লাবনের সম্ভাবনা রয়েছে।
দক্ষিণ ক্যারোলিনা ও চার্লস্টন শহরেও সতর্কতামূলক জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন নালা পরিষ্কার, পাম্প প্রস্তুতকরণ ও জরুরি টিম মোতায়েনের কাজ শুরু করেছে, যাতে পরিস্থিতি খারাপ হলে দ্রুত সাড়া দেওয়া যায়।
হারিকেন হামবার্তো সম্পর্কিত তথ্য
এদিকে, অন্যদিকে সমুদ্রের গভীরে আরেকটি শক্তিশালী হারিকেন হামবার্তো সক্রিয় রয়েছে। এটি বর্তমানে ক্যাটাগরি-৪ পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ১৪০ মাইল। ঝড়টি বারমুডার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছে এবং আগামী কয়েকদিন উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হবে।
যদিও এটি সরাসরি স্থলভাগে আঘাত হানার সম্ভাবনা নেই, তবে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূল ও বারমুডার সাগরপৃষ্ঠে উচ্চ ঢেউ ও বিপজ্জনক রিপ কারেন্ট তৈরি করবে।
সবমিলিয়ে, ট্রপিক্যাল স্টর্ম ইমেল্ডা ও হারিকেন হামবার্তো—দুটি ঝড়ই অ্যাটলান্টিকে তীব্র আবহাওয়া পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। উপকূলবর্তী মানুষদের সতর্ক থাকা এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।