২০২৫ সালের আটলান্টিক ঘূর্ণিঝড় মৌসুম ধীর গতিতে শুরু হলেও এখন একের পর এক শক্তিশালী ঝড় গঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হলো হারিকেন হামবার্তো, যা ইতোমধ্যেই ক্যাটাগরি–৫ মাত্রায় পৌঁছে গেছে। অপরদিকে ট্রপিক্যাল ডিপ্রেশন নাইন-ও দ্রুত শক্তিশালী হয়ে হারিকেনে রূপ নেওয়ার পথে রয়েছে।
আবহাওয়া দপ্তরের সর্বশেষ তথ্যে জানানো হয়েছে, হামবার্তোর স্থায়ী বাতাসের গতি ঘণ্টায় ১৬০ মাইল ছাড়িয়ে গেছে। এর ফলে এটি সর্বোচ্চ শক্তির হারিকেন হিসেবে কয়েকদিন ধরে বজায় থাকতে পারে। বর্তমানে ঝড়টি উত্তর–উত্তরপশ্চিম দিকে ঘণ্টায় ১০ মাইল বেগে অগ্রসর হচ্ছে এবং মূলত সমুদ্র উপকূলে বিপজ্জনক ঢেউ সৃষ্টি করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই ঢেউগুলো প্রথমে উত্তর লিউয়ার্ড দ্বীপপুঞ্জ, ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ, পুয়ের্তো রিকো ও বারমুডায় আঘাত হানবে। সোমবার থেকে এগুলো যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলে পৌঁছাবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এগুলো প্রাণঘাতী ঢেউ এবং রিপ কারেন্ট তৈরি করতে পারে, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
শনিবার লিউয়ার্ড দ্বীপপুঞ্জের উত্তর–পূর্বে ৩৩০ নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থিত একটি বয়া ১০ ফুট বা তারও বেশি উচ্চতার ঢেউ পরিমাপ করেছে। সেই অঞ্চলের সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা ছিল প্রায় ৮৬.৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট, যা ঝড়ের শক্তি বাড়ানোর প্রধান জ্বালানি হিসেবে কাজ করছে। হামবার্তোর কেন্দ্র থেকে ২৫ মাইল পর্যন্ত এলাকাজুড়ে হারিকেন-শক্তির বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে, ট্রপিক্যাল ডিপ্রেশন নাইন কিউবার পূর্ব প্রান্ত থেকে প্রায় ২০০ মাইল উত্তর–পশ্চিমে অবস্থান করছে। এর বাতাসের গতি ঘণ্টায় ৩৯ মাইল ছাড়ালে এটি ট্রপিক্যাল স্টর্মে পরিণত হবে এবং সম্ভবত নাম পাবে “ইমেলদা”। আগামী কয়েকদিনে ঝড়টি আরও শক্তি সঞ্চয় করে হারিকেনে রূপ নেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ডিপ্রেশন নাইন উত্তরমুখী হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলের সমান্তরাল পথে অগ্রসর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণ ও উত্তর ক্যারোলাইনার উপকূলীয় অঞ্চলে আকস্মিক বন্যা, নদী ও শহুরে এলাকায় প্লাবনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে ফ্লোরিডা থেকে শুরু করে ক্যারোলাইনা পর্যন্ত। সেখানে ৬ থেকে ১০ ইঞ্চি পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে।
ঝড় মোকাবিলায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে এবং উদ্ধারকাজে সেনা সদস্যদের নিয়োজিত করা হয়েছে। স্থানীয় আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, ঝড়ের অগ্রগতির ফলে দক্ষিণ ক্যারোলাইনার উপকূলে আঘাত হানার সম্ভাবনা এখনো উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ঝড় যদি সমুদ্র উপকূলে থেমে যায়, তবে প্লাবনের আশঙ্কা আরও বাড়তে পারে।
শনিবার ফ্লোরিডার আটলান্টিক উপকূলে, বিশেষ করে পাম কোস্ট থেকে ডেটোনা বিচ পর্যন্ত ট্রপিক্যাল স্টর্ম ওয়াচ জারি করা হয়েছে। একইসঙ্গে, বাহামাসের বিভিন্ন অঞ্চলেও সতর্কতা জারি করা হয়েছে, যেখানে ১ থেকে ৩ ফুট পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাস ও প্রাণঘাতী ঢেউ দেখা দিতে পারে। কর্তৃপক্ষ উত্তর বাহামাসের কিছু অঞ্চলের বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে নির্দেশ দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার নাগাদ ডিপ্রেশন নাইন পূর্ণাঙ্গ হারিকেনে রূপ নিতে পারে। এর মধ্যেই এই মৌসুমে পরপর কয়েকটি শক্তিশালী ঝড় সৃষ্টি হওয়া নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। এর আগে “এরিন” ও “গ্যাব্রিয়েল” নামের দুটি ঘূর্ণিঝড়ও বড় আকার ধারণ করেছিল। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, ১৯৩৫ সালের পর এই প্রথম মৌসুমের শুরুতে পরপর তিনটি বড় ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছে।
২০২৫ সালের আটলান্টিক মৌসুমে এ ধরনের শক্তিশালী ঝড় গঠিত হওয়া আগামীর জন্য আরও বিপদের ইঙ্গিত বহন করছে বলে সতর্ক করেছেন আবহাওয়াবিদরা।