আজ বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে এক অত্যন্ত বৈচিত্র্যময় ম্যাচ শুরু হচ্ছে, যেখানে মুখোমুখি হবে কাজাখস্তানের কাইরাত আলমাতি এবং স্পেনের কিংবদন্তি ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ। অনেকের কাছে এটিকে ইতিহাসিক বলা হচ্ছে, কারণ শক্তি, ঐতিহ্য এবং সাফল্যের দিক থেকে দুটি দলের মধ্যে বিশাল ফারাক বিরাজ করছে।
রিয়াল মাদ্রিদ, ১৯০২ সালে প্রতিষ্ঠিত, ইউরোপীয় ফুটবলের সবচেয়ে সফল ক্লাব। ১৯২৯ সাল থেকে লা লিগায় অবিচলভাবে খেলে আসছে তারা এবং সর্বোচ্চ ৩৬টি লা লিগা শিরোপা অর্জন করেছে। এছাড়া চ্যাম্পিয়নস লিগে ১৫ বার শিরোপা জিতেছে, যা ক্লাবটির ইতিহাসকে বিশ্বের মধ্যে স্বতন্ত্র করেছে। রিয়ালের ১২৩ বছরের ইতিহাসে ১৩৩টি ট্রফি রয়েছে, যার মধ্যে ইউরোপীয় ট্রফি ১৫টি। এ ক্লাবের বর্তমান স্কোয়াডের বাজারমূল্য প্রায় ১৪০ কোটি ইউরো, যা কাজাখস্তানের মোট জিডিপির প্রায় ২.৭ শতাংশ।
অন্যদিকে কাইরাত আলমাতি ১৯৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত। সোভিয়েত ইউনিয়নের সময়কাল থেকে শুরু করে, ১৯৯১ সালে স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর কাজাখস্তান প্রিমিয়ার লিগে চারবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সর্বশেষ জয় তারা পায় গত বছর, যা তাদের চ্যাম্পিয়নস লিগের বাছাইপর্বে অংশগ্রহণের সুযোগ এনে দিয়েছে। কাইরাতের স্কোয়াডের বর্তমান মূল্য মাত্র ১ কোটি ৩০ লাখ ইউরো। ক্লাবটির আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা সীমিত হলেও চ্যাম্পিয়নস লিগে এবারের অংশগ্রহণ তাদের জন্য ইতিহাস তৈরি করবে।
ম্যাচটি কাইরাতের মাঠে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যা ভৌগোলিকভাবে প্রায় ৪ হাজার কিলোমিটার দূরে। এটি দুই দলের মধ্যে শক্তি ও ইতিহাসের দিক থেকে একেবারেই অসম লড়াই। রিয়াল মাদ্রিদ ইউরোপের শীর্ষ ক্লাব প্রতিযোগিতায় ৫৬তম মৌসুম খেলছে এবং এর মধ্যে ৫,০২টি ম্যাচে জিতেছে ৩০১টি। তাদের সর্বাধিক গোলদাতা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, যিনি ১০৫ গোল করেছেন। কাইরাতের জন্য এটি চ্যাম্পিয়নস লিগে প্রথম অভিজ্ঞতা, যদিও তারা লিসবনে স্পোর্টিং লিসবনের কাছে ৪-১ গোলে পরাজিত হয়েছিল।
ট্রান্সফার বাজারেও রিয়ালের বিনিয়োগ অসামান্য। জুড বেলিংহাম ও এডেন হ্যাজার্ডকে কিনতে প্রায় ১০ কোটি ইউরো খরচ করেছে ক্লাবটি। কাইরাতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ট্রান্সফার ছিল পোলিশ মিডফিল্ডার জাচেক গোরালস্কি, যাকে ১০ লাখ ইউরোতে নেওয়া হয়েছিল।
সমর্থক ও সামাজিক যোগাযোগের দিক থেকেও দুটি দলের মধ্যে বিশাল ফারাক। রিয়ালের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডলের অনুসারী সংখ্যা ১৭ কোটি ৭০ লাখ, যা বিশ্বের খেলাধুলা ক্লাবের মধ্যে সর্বোচ্চ। কাইরাতের অনুসারী সংখ্যা ৪ লাখ, তবে চ্যাম্পিয়নস লিগে অংশগ্রহণের পর তাদের অনুগামী সংখ্যা বাড়ছে।
এই ম্যাচটি শুধুই ফুটবল ম্যাচ নয়; এটি দুই ভিন্ন জগতের ক্লাবের সাক্ষাৎ, যেখানে ইতিহাস, অর্থ, সাফল্য এবং বিশ্বখ্যাতির দিক থেকে এক অসম লড়াই প্রদর্শিত হবে।