চলতি মৌসুমের শুরুটা কিলিয়ান এমবাপ্পের জন্য যেন অপ্রতিরোধ্য। একের পর এক ম্যাচে গোল, নতুন রেকর্ড—ফরাসি ফরোয়ার্ডের জাদু ফুটবলপ্রেমীদের মুগ্ধ করেছিল। ১৫টি ম্যাচে ১৮টি গোল করেছেন তিনি, যা তার গতিশীলতার নিখুঁত প্রমাণ। এই ছন্দে থাকা তারকা যখন লিভারপুলের বিপক্ষে অ্যানফিল্ডে নামলেন, তখন সবার নজর ছিল কেবল তার ওপর।
কিন্তু গত রাতে ঘটে বিপরীত ঘটনা। লিভারপুলের শক্তিশালী রক্ষণ ব্যবস্থা এমবাপ্পেকে কোনো সুযোগই দেয়নি। রিয়াল মাদ্রিদের ১–০ গোলে হারের রাতে এমবাপ্পে একেবারেই নিষ্প্রভ ছিলেন। আগের মৌসুমেও লিভারপুলের কাছে রিয়াল ২–০ গোলে হেরেছিল, সেই সময়ও এমবাপ্পে লক্ষ্যভ্রষ্ট ছিলেন।
পরিসংখ্যানে এমবাপ্পের হতাশাজনক পারফরম্যান্স স্পষ্টভাবে ফুটেছে। আক্রমণাত্মক খেলার সব প্রধান সূচকে শূন্য—গোল, অ্যাসিস্ট, সুযোগ তৈরি, লক্ষ্যভিত্তিক শট, নিখুঁত শট অ্যাকুরেসি, একিউরেট ক্রস, এমনকি ট্যাকল জয়ও শূন্য। ফাইনাল থার্ডে মাত্র একটি সফল পাস এবং পুরো ম্যাচে প্রতিপক্ষ বক্সে বল স্পর্শ মাত্র চারবার।
তবে হতাশার মাঝেও একটাই উজ্জ্বল দিক ছিল—ড্রিবলিং। পাঁচটি ড্রিবলের সবটিতেই তিনি সফল হয়েছেন। কিন্তু এটি পর্যাপ্ত ছিল না।
ম্যাচ শেষে রিয়াল কোচ পুরো আক্রমণভাগকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘ফাইনাল থার্ডে হুমকি তৈরি করতে আমাদের ঘাটতি ছিল।’ পরিসংখ্যানে স্পষ্ট, সেই ঘাটতি এমবাপ্পের দিকে ইঙ্গিত করছে। তারকা ফরোয়ার্ড ম্যাচে বিশেষ প্রভাব ফেলতে পারেননি, যা ভক্তদের জন্যই নয়, দলের জন্যও হতাশাজনক।
লিভারপুল এই সুযোগকে ব্যবহার করেছে নিখুঁতভাবে। কোচ আর্নে স্লট বলেন, ‘আমার খেলোয়াড়দের আগে বলেছি, রিয়াল লা লিগায় ২৬ গোল করেছে। এমবাপ্পে ও ভিনিসিয়ুস একসঙ্গে ২৪ গোলে অবদান রেখেছে। আমরা লক্ষ্য নিয়েছিলাম, এই দুজনকে গোল করার সুযোগ না দেওয়া।’
এই নির্দেশ লিভারপুলের ডিফেন্ডাররা নিখুঁতভাবে বাস্তবায়ন করেছেন। ম্যাচ জুড়ে এমবাপ্পে-ভিনিসিয়ুস জুটি নীরব ছিলেন, যা শেষ পর্যন্ত লিভারপুলের জন্য দারুণ জয় এবং রিয়ালের জন্য এক হতাশার রাত রূপ নেয়।
ম্যাচের পুরো চিত্রই প্রমাণ করেছে, কখনও অপ্রতিরোধ্য মনে হওয়া তারকারও দিন আসে, যখন প্রতিপক্ষের কৌশল ও রক্ষণ ব্যবস্থা তাকে ব্যর্থ করে। অ্যানফিল্ডে এমবাপ্পের এই অদৃশ্য রাত ফুটবল বিশ্বের জন্য এক শিক্ষণীয় উদাহরণ—কীভাবে পরিকল্পনা, সতর্কতা এবং দলগত সমন্বয়ই নির্ধারণ করে ম্যাচের ফলাফল।
এটি শুধু একটি ম্যাচের ব্যর্থতা নয়, বরং একটি সতর্কবার্তা—সর্বোচ্চ দক্ষতার খেলোয়াড়ও কখনও ব্যর্থ হতে পারে, যদি প্রতিপক্ষের প্রস্তুতি ও রক্ষণব্যবস্থা নিখুঁত থাকে। এমবাপ্পের এই রাত ভক্ত এবং বিশ্লেষকদের মনে রেখে যাবে, যে ফুটবলে শুধু ব্যক্তিগত দক্ষতা নয়, দলগত কৌশলও সমান গুরুত্বপূর্ণ।



